Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

‘ভাগ্যিস ইউপি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম’

খাওয়া-ঘুম ফেলে পাগলের মতো এক হাসপাতাল থেকে আর একটায় ছুটেছি। কিন্তু একটু অক্সিজেন জোগাড় করতে পারিনি মানুষটার জন্য।

হাসপাতালের বেডে রেখা যাদব।

হাসপাতালের বেডে রেখা যাদব। ছবি: তাপস ঘোষ।

রেখা যাদব
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

আমি মগরার মেয়ে। তবে, বিবাহসূত্রে অনেক বছর ধরেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। অযোধ্যার ফৈজাবাদে থাকি। মাসখানেক ধরে করোনার বাড়বাড়ন্তের কথা শুনছিলাম। রোগটা ক্রমশ চেপে বসতে থাকে। দিনের পর দিন সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েই চলে। আমরা ফৈজাবাদে যেখানে থাকি, সেখানেও বহু মানুষ আক্রান্ত।

সম্প্রতি স্বামী আর আমার— দু’জনেরই জ্বর হয়। সঙ্গে সর্দি-কাশি। কোভিড পরীক্ষা করাই। বুধবার রিপোর্ট আসে। দু’জনেই পজ়িটিভ। স্বামীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা কমে গিয়েছিল। ওঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেন দেওয়ার দরকার ছিল। সেই কারণে বুধবার বিকেলে তাঁকে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাই। বলা হয়, শয্যা নেই। তার পর থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে একটা-দু’টো নয়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এক এক করে একাধিক জেলার ১৬টা হাসপাতালে ঘুরেছি। কোথাও বলেছে, শয্যা নেই। কোথাও শয্যা থাকলেও অক্সিজেন নেই। এই ঘোরাঘুরিতেই বুধবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল হয়ে যায়। খাওয়া-ঘুম ফেলে পাগলের মতো এক হাসপাতাল থেকে আর একটায় ছুটেছি। কিন্তু একটু অক্সিজেন জোগাড় করতে পারিনি মানুষটার জন্য।

এর মধ্যে ওঁর অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। আমার শরীরও ক্রমে খারাপ হচ্ছিল। কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম, বুঝিয়ে বলতে পারব না। একটা হাসপাতাল অবশ্য বলেছিল, অক্সিজেন পাওয়া যাবে। তবে তখনই নয়, পরে। এই অবস্থায় মগরায় ভাইকে ফোন করি। ভাই চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাটের নার্সিংহোমে কথা বলে শয্যার ব্যবস্থা করে। অক্সিজেন পাওয়া যাবে বলেও জানায়। এর পরে আর অন্য কিছু ভাবিনি। ৬০ হাজার টাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে শুক্রবার রাতে হুগলি রওনা হই। ৮০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসে শনিবার সন্ধ্যায় চুঁচু়ড়ার নার্সিংহোমে দু’জনে ভর্তি হই।

মাঝের ১৮ ঘণ্টা যে কী ভাবে কেটেছে, জানি না! অক্সিজেন ছাড়াই এতটা পথ স্বামীকে আনতে হয়েছে। শুধু ভেবেছি, কতক্ষণে পৌঁছব। নার্সিংহোমে ভর্তির পরেই অক্সিজেন দেওয়া হয়। স্বামীর অবস্থা এখন আগের থেকে ভাল। আমিও ভালই আছি। দুশ্চিন্তা কেটেছে।

গোটা দেশেই নাকি অক্সিজেনের অভাব! অক্সিজেনের অভাবে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হতে পারে, হাড়ে হাড়ে বুঝলাম। ভাগ্যিস ইউপি থেকে পালানোর সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। না হলে কী হত, কে জানে!

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy