বিধায়কের কোটা থেকে তৃণমূল নেত্রীদের চাকরি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্যামপুরে। সমাজ মাধ্যমে এই নিয়ে নানা লেখা ছড়িয়ে পড়েছে (পোস্টের সত্যতা বিচার করেনি আনন্দবাজার)। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, কোনও পরীক্ষা ছাড়াই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী পদে নিয়োগ করা হয়েছে কয়েক জনকে। তার মধ্যে রয়েছেন খোদ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আর ওই সমিতির সভাপতির মেয়ে। অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।
নারী শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করার পর নিজস্ব ক্ষমতায় দফতর পরীক্ষা না নিয়ে সরাসরি নিয়োগ করতে পারে। বিধায়কও এ ক্ষেত্রে তাঁর কোটা ব্যবহার করতেই পারেন। সেই মতো শ্যামপুর-১ ও ২ ব্লক থেকে আবেদন আসার পর তদন্ত কমিটি গড়ে দফতরে পাঠানোর পরে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি শ্যামপুর ১ এবং ২ ব্লকের ছ’জন মহিলা, নারী শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ দফতরে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে কাজের নিয়োগপত্র পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নিজে। তাছাড়া রয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মেয়েও। বিরোধীদের অভিযোগ, শুধুমাত্র তৃণমূল নেতৃত্বকেই এই মনোনয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কংগ্রেস নেতা আতিয়ার রহমানের ক্ষোভ, ‘‘বর্তমানে সব পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে চাকরি হচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা কোনও পরীক্ষা না দিয়েই নিজেরাই চাকরি করিয়ে নিচ্ছে। মানুষের সেবা তো দূর, নিজের সেবা করছেন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ।’’
হাওড়া জেলা সিপিএমের সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যে দলতন্ত্র চলছে। এই দলটি যতদিন রাজ্যে থাকবে, ততদিন মেধাবীদের চাকরি হবে না।’’
বিজেপি নেতা কৌশিক চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল গরিব মানুষের কথা ভাবে না। তারা স্বজনপোষণেই ব্যস্ত।’’
অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ শ্যামপুরের তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি চাকরির ক্ষেত্রে এই কোটা বহুকাল ধরে আছে। সেটা দলকে জানিয়েছিলাম। দল সিদ্ধান্ত নিয়ে যাঁদের নাম পাঠিয়েছিল সেগুলিকে আমি অনুমোদন করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু জানি না।’’
নিজেদের যোগ্যতাতেই চাকরি হয়েছে বলে দাবি করে শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মৌমিতা দাস বলেন, ‘‘আমি উচ্চশিক্ষিত। বিধায়ক কোটায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেছি। তাতে ক্ষতি কি? আমি রাজনীতি করি, এটাই কি
আমার অপরাধ?’’
শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কান্তা মান্না বলেন, ‘‘প্রত্যেকে নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। বিরোধীদের কোনও কাজ নেই। তাই তারা কুৎসা রটাচ্ছে।’’
শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই চাকরির ক্ষেত্রে বিধায়ক তাঁর কোটা ব্যবহার করতে পারেন। বিধায়কের আবেদনের ভিত্তিতে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে কোনও সমস্যা নেই।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)