সেরেস্তার পাশেই পাঁক ভর্তি নর্দমা। দুর্গন্ধে টেকা দায়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় কাজের জায়গা বলতে টিনের খুপরি চালাঘর। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না শৌচাগারগুলি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গোটা চত্বর জুড়ে মোটরবাইকের পার্কিং। ফলে, কমে গিয়েছে সহজে হাঁটাচলার পরিসর।
একলপ্তে এই হল হাওড়া জেলা আদালত চত্বরের বর্তমান ছবি। এরই মধ্যে ওই চত্বরেই অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে ছ’তলা ঝাঁ-চকচকে নতুন আদালত ভবন। গত ৩০ বছর ধরে চলা আইনজীবীদের আন্দোলনের ফসল। অভিযোগ, শুধুমাত্র সরকারি উদাসীনতার কারণে গত তিন বছরেও সেখানে তৈরি হয়নি আসবাবপত্র। চালু হয়নি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা। ফলে, কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বহুতল ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে। অবিলম্বে নতুন আদালত ভবনের বাকি কাজ শেষ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইনজীবীরা।
রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলির পরিকাঠামোগত দুরবস্থা নিয়ে আগেই ভরা এজলাসে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। পরিকাঠামোগত খামতি দূর করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সেই নির্দেশ আজ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। তার জ্বলন্ত উদাহরণ অসম্পূর্ণ এই আদালত ভবন।
হাওড়া আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা আদালতের ২৪ কাঠা জমির মধ্যে ১১ কাঠা জমিতে নতুন ভবন তৈরির শিলান্যাস হয়েছিল। বিস্তর কাঠখড় পোড়ানোর পরে কাজ শুরু হলেও ১০তলা বহুতলের জায়গায় ছ’তলা পর্যন্ত হয়ে প্রথম দফার কাজ শেষ হয়। এর জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও নতুন আদালত ভবনের আসবাবপত্র তৈরি, এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার কাজে এখনও হাতই দেওয়া হয়নি।
আইনজীবীদের অভিযোগ, আদালত কক্ষে বাসা করছে পায়রা। তীব্র গরমে তাঁদের অস্থায়ী সেরেস্তায় বসে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ, চোখের সামনে গোটা একটি বহুতল প্রায় শেষ হয়ে পড়ে থাকলেও সেখানে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তাঁদের দাবি, দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু হলে মহিলা আইনজীবীদের জন্য পৃথক কক্ষ এবং সমস্ত রকমের সুবিধা দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে থাকুক একটি প্রেক্ষাগৃহ ও বার লাইব্রেরি।
হাওড়া ক্রিমিনাল কোর্ট বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসুরায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অসমাপ্ত আদালত ভবন নিয়ে আমরা গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আর্কষণ করেছি। দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করার জন্য আর্থিক অনুমোদন দিতে গত কয়েক বছর ধরে আইন বিভাগের সচিবকে জানিয়ে আসছি। আজও সেই অনুমোদন মেলেনি।’’ তিনি জানান, আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
নতুন আদালত ভবন নির্মাণের দায়িত্বে আছে রাজ্য পূর্ত দফতর। দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘অর্থ দফতরের অনুমোদন এখনও আসেনি। তা শীঘ্রই মিলবে বলে শুনেছি। তার পরেই বকেয়া থাকা কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)