Advertisement
E-Paper

সহিষ্ণুতা হারাচ্ছে কি শহর, যুবক খুনে প্রশ্ন

কয়েক মাস আগে কলেজ-পড়ুয়া ছেলের সামনে টোটো থেকে নামিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর করে এক যুবক। ছেলে যতক্ষণে লোকজনকে ডেকে আনেন, বাবা মারা গিয়েছেন।

Chandannagar

 উত্তেজনা চন্দননগর হাসপাতালে। মঙ্গলবার বিকেলে। ছবি: তাপস ঘোষ।

প্রকাশ পাল , সুদীপ দাস

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ ০৭:০৮
Share
Save

মঙ্গলবার বিকেল। হাসপাতালের গেটের সামনে এক যুবককে পেটাচ্ছে কয়েক জন। কিল, চড়, ঘুষি, লাথি চলছে। দোকানপাট খোলা। লোকজনের ভিড়। অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছেন। কেউ বাধা দিচ্ছেন না! যতক্ষণে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হল, যুবকের দেহে প্রাণ নেই।

কয়েক মাস আগে কলেজ-পড়ুয়া ছেলের সামনে টোটো থেকে নামিয়ে এক ব্যক্তিকে মারধর করে এক যুবক। ছেলে যতক্ষণে লোকজনকে ডেকে আনেন, বাবা মারা গিয়েছেন। কেউ তাঁকে বাঁচাতে আসেননি।

তার আগে চায়ের দোকানে চা-বিস্কুটের দাম মেটাতে না পারায় রাস্তায় ফেলে মারা হয় এক প্রৌঢ়কে। সে ক্ষেত্রেও অনেকে দাঁড়িয়ে ‘মজা’ দেখেছিলেন।

ঘটনাচক্রে, তিনটি ঘটনাই চন্দননগর শহরের। যে জনপদের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা নিয়ে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন অসংখ্য মানুষ। এ হেন শহরে পর পর এক এমন ঘটনায় ছড়িয়েছে উদ্বেগ। জনমানসে প্রশ্ন, আলোর শহর কি সহিষ্ণুতা হারাচ্ছে? প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চেষ্টা না করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাতেই স্বচ্ছন্দ্য সাধারণ মানুষের বড় অংশ? উঠছে নিরাপত্তার প্রশ্নও।

মঙ্গলবার বিকেলে চন্দননগর হাসপাতালের সামনে ভদ্রেশ্বরের বছর আঠাশের যুবক সুপ্রিয় সাঁতরার মৃত্যুর ঘটনায় মেয়র রাম চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক। চন্দননগরের সংস্কৃতির সঙ্গে এ জিনিস বেমানান। উদ্বেগের বিষয়।’’ মেয়র জানান, তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন, যাতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ ধারা প্রয়োগ করে দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এক মহিলা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুরে ভদ্রেশ্বর স্টেশনের কাছে কেবল্‌ লাইনের কর্মী সুপ্রিয়ের মোটরবাইকের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা উমেশ যাদবের ধাক্কা লাগে।
দু’জনের মধ্যে হাতাহাতিতে পড়ে মাথা ফাটে উমেশের। দ্রুত তাঁকে বাইকে তুলে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যান সুপ্রিয়ই। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে বেরোতেই সুপ্রিয়কে বেধড়ক মারধর করে উমেশের আত্মীয়েরা। ঘটনাস্থলেই মারা যান তরতাজা যুবক।

শহরের প্রবীণ চিত্রশিল্পী প্রদীপ শূরও ব্যথিত এমন ঘটনায়। তিনি মনে করেন, সংস্কৃতির জায়গা হিসেবে যে চন্দননগরের ছবি উঠে আসে, সেই চরিত্র এখন নেই। গত ২০-৩০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। সংস্কৃতিমনস্ক যাঁদের বলা হয়, সেই লোকজন ক্রমশ সংখ্যালঘু হচ্ছেন! তাঁর কথায়, ‘‘অত্যন্ত পীড়াদায়ক ঘটনা। সব তেকে লজ্জার, যিনি হাসপাতালে নিয়ে এলেন— তাঁকেই এ ভাবে মারা হল!’’

প্রাবন্ধিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘ভয়ঙ্কর ঘটনা’। তিনি মনে করিয়ে দেন, এক সময়ে রাজ্যের নানা জায়গায় গণপ্রহারের ঘটনা এবং তার সঙ্গে রাজনীতির যোগ। ওই সব ঘটনায় জনমানসে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। সংবাদপত্রে কম লেখালেখি হয়নি। নিজের প্রিয় শহরে এমন ঘটনায় তিনিও বিচলিত। তাঁর কথায়, ‘‘যিনি মোটরবাইকে করে হাসপাতালে আনলেন, তিনি তো একটা বিবেকের কারণেই এই ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে এমন ঘটবে, মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি হওয়া উচিত।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘চন্দননগর সংস্কৃতির শহর। কিন্তু ক্রমে মিশ্র বসতি তৈরি হচ্ছে। ফলে পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। যেমন, চন্দননগরবাসীর স্ট্র্যান্ড নিয়ে একটা গর্ব ছিল। স্ট্র্যান্ডে বিকেল-সন্ধ্যায় যাঁরা বসতেন, তাঁদের মধ্যে রুচিবোধ ছিল। সেটা ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandannagar Crime

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}