ভেন্ডর কামরায় উনিশ পদ দিয়ে আইবুড়োভাত সারলেন অতনু শাসমল। —নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের মরসুম এখন। বিয়ে মানেই নানা রীতি। পাত্র এবং পাত্রীকে আইবুড়োভাত খাওয়ানো যেমন। হবু বর ও বউকে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা নিমন্ত্রণ করে নানা পদের খাবার খাওয়ান। বাড়িতে ডেকে আইবুড়োভাত খাওয়ানোটাই দস্তুর। কিন্তু হবু বর অতনু শাসমল আইবুড়োভাত খেলেন ট্রেনে। আর ‘অন্য রকম’ আইবুড়োভাত খাওয়ার সাক্ষী থাকল তারকেশ্বর থেকে হাওড়াগামী একটি লোকাল ট্রেন।
কাজের সূত্রে প্রতি দিন নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেনে চড়ে তারকেশ্বর থেকে হাওড়া যান অতনু। যাতায়াতের পথে রোজই সমবয়সি এবং অসমবয়সি অনেকের সঙ্গেই তাঁর দেখা হয়। আড্ডা হয়। হাসিঠাট্টা হয়। চলে তর্কবিতর্কও। তার পর হাওড়া স্টেশনে নেমে যে যার গন্তব্যে চলে যান। আবার কাজ শেষে হাওড়া থেকে একই ভাবে বাড়ি ফেরা। রোজনামচার এই জীবনে আসা-যাওয়ার পথে ওই সফরসঙ্গীদের সঙ্গে অদ্ভুত হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে অতনুর। চলমান ট্রেনের কামরায় তাঁরা একটা পরিবারের মতো। আর পরিবারের সদস্যের বিয়ের আগে আইবুড়োভাত খাওয়ানো হবে না, সেটাই বা কেমন করে হয়! তাই ট্রেনেই আয়োজন হল আইবুড়োভাতের। বাহিরখন্ডের অতনুকে ট্রেনের মধ্যে পাত পেড়ে খাওয়ালেন পিন্টু, সঞ্জয়, মিলন, রাজু, নির্মল, গোবিন্দ এবং মানিকরা। চলল ঠাট্টা-ইয়ার্কি। সেই দৃশ্য উপভোগ করলেন অন্য যাত্রীরাও।
অতনুর কথায়, ‘‘আমরা সকলে ৯টা ৩২ মিনিটে তারকেশ্বর- হাওড়া লোকালের প্রথম ভেন্ডরের যাত্রী।’’ লাজুক হেসে যুবকের সংযোজন, ‘‘আমার বিয়ের খবর শুনে ওরা এই আয়োজন করেছে।’’ বলেই সামনে রাখা হরেক টিফিন বাক্স, মাটির থালা এবং গেলাসের দিকে আঙুল দেখালেন তিনি।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর অতনুর বিয়ে। পাত্রীর বাড়ি হুগলির হরিপালে। ট্রেনের বন্ধুদের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করতেই অতনুর জন্য এই ‘সারপ্রাইজ’ আইবুড়োভাতের আয়োজন করেন সবাই। কিন্তু সেই ‘সারপ্রাইজ’ যে এমন হবে, তা কল্পনাও করেননি অতনু। ট্রেনে উঠে একেবারে চমকে যান তিনি। দেখেন, ভেন্ডর কামরা সাজানো ফুলের মালা আর বেলুন দিয়ে। কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই সঙ্গীরা ঘিরে ধরলেন অতনুকে। হবু বরকে ধুতি-পাঞ্জাবি পরিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে উনিশ পদ দিয়ে আইবুড়োভাত খাওয়ালেন তাঁরা। ভাত, মাছ, মাংস, তরকারি, দই, মিষ্টিতে একেবারে এলাহি আয়োজন। সবই বাড়ি থেকে রান্না করে আনা। কেনা নয়। অতনুর বন্ধু পিন্টুর কথায়, ‘‘অতনু আগে থেকে কিছুই জানত না। আমাদের কাছ থেকে এ রকম একটা উপহার পেয়ে ও আপ্লুত। আমরা ভীষণ খুশি।’’ পাশ থেকে দাঁড়ানো আর এক সহযাত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আসা-যাওয়ার মাঝে এই তো জীবন কালীদা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy