Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Sarat Chandra Chattopadhyay

শরৎ-স্মৃতি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে তৎপরতা দাবি

গত বছর কথাশিল্পীর জন্মদিনের পরেই তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের দুর্দশা নিয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের জেরে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে।

শুক্রবার এ ভাবেই আগাছায় ঢাকা ছিল লেখকের জন্মভিটে। সোমবার, সাফসুতরো (ইনসেটে)। ছবি: তাপস ঘোষ

শুক্রবার এ ভাবেই আগাছায় ঢাকা ছিল লেখকের জন্মভিটে। সোমবার, সাফসুতরো (ইনসেটে)। ছবি: তাপস ঘোষ Sourced by the ABP

প্রকাশ পাল
দেবানন্দপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৯
Share: Save:

নাছোড়বান্দা বৃষ্টি সবে একটু ধরেছে। শুক্রবার হাট করে খোলা গেট দিয়ে ঢোকা গেল কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মভিটেতে। আঁতুড়ঘরের দরজাও খোলা। ভিতরে কুকুর শুয়ে। ভিটে জুড়ে আগাছার দখল। দীর্ঘ অযত্নের ছাপ চতুর্দিকে। কোথায় পর্যটন কেন্দ্র!

হুগলির দেবানন্দপুরের মানুষের অভিজ্ঞতা, সম্বৎসর এ ভাবেই থাকে ওই বাড়ি। জন্মদিন এলে ঝাড়পোঁচ হয়। যেমন, রবিবার হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার শরৎচন্দ্রের ১৪৯তম জন্মদিন পালিত হবে।

এক বছর আগে শরৎচন্দ্রের জন্মস্থান ঘিরে রাজ্য সরকারের পর্যটন কেন্দ্রের ঘোষণায় এলাকাবাসী ভেবেছিলেন, এ বার বুঝি বারো মাসই মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবে ‘পল্লিসমাজ’-এর লেখকের বাড়ির। সেই ভাবনা যে বাস্তব রূপ পায়নি, ভিটের চেহারাতেই স্পষ্ট।

গত বছর কথাশিল্পীর জন্মদিনের পরেই তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের দুর্দশা নিয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের জেরে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে। স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদার এসে রাজ্যের তরফে পর্যটন কেন্দ্রের ঘোষণা করে জানান, শরৎচন্দ্রের জন্মভিটে, গুরুগৃহ ভগ্ন প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালা, চারটি শিবমন্দির, সেমিনার হল সংস্কার করা হবে। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত অন্যান্য স্থানগুলিরও সৌন্দর্যায়ন করা হবে। জোড়ামন্দির সংলগ্ন মাঠের সীমানা পাঁচিল দেওয়া হবে। দু’টি তোরণ, অতিথি নিবাস, ক্যান্টিন ইত্যাদিও হবে। ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন।

তার পরে পার ৮ মাসেরও বেশি। চোখে পড়ার মতো কোনও কাজ হয়নি। প্রশাসনের দাবি, প্রক্রিয়া চলছে। গত বছর বিধায়ক জানিয়েছিলেন, প্রথম পর্যায়ে রাজ্য আড়াই কোটি টাকা দেবে। পরে এক কোটি দেওয়ার কথা বলা হয়। শনিবার বিধায়কের দাবি, ‘‘সরকার যে ১ কোটি টাকা দিয়েছে, তাতে তো কাজ হচ্ছে।’’ জেলার পরিকল্পনা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাজ্যের পর্যটন দফতরের অধীনে ওই কাজ হবে। সরাসরি রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম করছে। চূড়ান্ত ডিপিআর (বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট) তৈরির কাজ চলছে, অথবা তা হয়েও যেতে পারে।’’

শরৎচন্দ্র অনুরাগী এবং স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, কথাশিল্পীর জন্মের সার্ধ-শতবর্ষ শুরুর মুখে পর্যটনের কাজে আরও তৎপরতা আশা করেছিলেন তাঁরা। হালচাল দেখে তাঁরা কার্যত হতাশ। তাঁরা স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৬ সালেও নানা প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও রাস্তা সংস্কার এবং তিন জায়গায় আলো বসানো বাদে কার্যত আর কিছু হয়নি। এখন দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের রাস্তার যা হাল, বেশি বৃষ্টিতে কার্যত নদী! শরৎচন্দ্র অনুরাগী সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটনের কোনও কাজ দৃশ্যত এগোয়নি। লেখকের জন্ম সার্ধ-শতবর্ষ পূর্তির জন্য এখন থেকে তৎপর হওয়া উচিত ছিল। কিছুই হয়নি।’’ জন্মভিটের হাল নিয়ে গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া, দেখার লোক না থাকলে যা হয়!

তুমুল বৃষ্টিতেই ম্যারাপ বাঁধছিলেন শ্রমিকেরা। পঞ্চায়েত সদস্য সুলতা রুইদাস তদারকি করছিলেন। উপপ্রধান পীযূষকান্তি ধর জানান, মাসখানেক আগে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা কোথায় কী কাজ হবে, পরিদর্শন করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শরৎচন্দ্রের জন্মভিটে পরিষ্কার ও রঙের কাজ পূর্ত দফতর করে। জন্মদিনের আগে বৃষ্টির মধ্যেও দিন-রাত কাজ করে সাফসুতরো করা হয়েছে।’’ জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কথাশিল্পীর জন্মদিন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গেই পালিত হবে। জন্ম সার্ধ-শতবর্ষ নিয়েও পরিকল্পনা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE