ভুয়ো ‘অফার লেটার’ হাতে রকি ঘোষাল। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালাতে পারছিলেন না। তিন বিঘা জমির মধ্যে ৫ কাঠা বিক্রি করেছেন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ছেলে রকি ঘোষাল চাকরির নিয়োগপত্র পাবেন শুনে আশার আলো দেখেছিলেন গোঘাটের হাজিপুর গ্রামের দম্পতি রতন ও তৃপ্তি ঘোষাল। কিন্তু, চাকরির নিয়োগপত্র দূর, বৃত্তি-সহ প্রশিক্ষণের যে ‘অফার লেটার’ রকি হাতে পেয়েছেন, সেটিও ভুয়ো।
হতাশ রতন বলেন, ‘‘স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেও যদি চাকরির বদলে প্রশিক্ষণের ভুয়ো চিঠি ধরানো হয়, তখন চাকরির ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার বুঝে গিয়েছি। ছেলেকে বলেছি, আমার চায়ের দোকানটা চালাতে। আমি দিনমজুরির কাজ খুঁজে নেব।’’ রতনবাবুর একটি চোখ নষ্ট। অন্য চোখের দৃষ্টিও ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছে। সেই চিকিৎসাতেও অনেক খরচ হচ্ছে। তৃপ্তি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েকে খুব কষ্ট করে পড়াচ্ছি আমরা। ছেলেটার একটা চাকরি হলে সংসারটা বাঁচে।”
গোঘাটের হাজিপুর ইউনিয়ন হাই স্কুলে কারিগরি শিক্ষা বিভাগে এ বছর পাশ করা বছর উনিশের রকির আক্ষেপ, ‘‘বাবার চায়ের দোকানে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে মনে হচ্ছে। বাড়িতে প্রতিদিনের অশান্তি সামলাতে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখানেই বসতে হতে পারে। পরিবারের অনটন সামলাতে চাকরিটা খুব দরকার ছিল।” বাড়ি লাগোয়া মাচায় বসে সদ্য যুবক জুড়ে দেন, ‘‘আমি অবশ্য চাকরির আশা এখনও ছাড়িনি।’’ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে চা-ঘুগনি বিক্রির পরামর্শও দিয়েছেন।
রকির কারিগরি শিক্ষায় বিষয় ছিল কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ, নেটওয়ার্কিং এবং ওয়েব পেজ ডেভেলপিং। ‘উৎকর্ষ বাংলা’ কর্মসূচিতে গত বুধবার হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এইচআইটি) থেকে যে ‘অফার লেটার’ পেয়েছেন, সেটি অবশ্য গুজরাতের সুজুকি মোটর সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া থাকা একটি সংস্থারদু’বছরের আইটিআই ‘ভেহিকলস টেকনিশিয়ান’ কোর্সের। ওই দিন সেই সেই সংস্থার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনও ‘অফার লেটার’ তারা পাঠায়নি। বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আইটি বিভাগের জেলা নোডাল দফতর, এইচআইটি থেকে ফোন করে বলা হয়, গুজরাতের ওই সংস্থায় এই মুহূর্তে যোগ দেওয়ার দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে কথা বলছে। তারা জানানোর পরে সেখানে যোগ দেওয়া যাবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় এইচআইটি থেকে জেলার মোট ১০৭ জনকে গুজরাতের সুরেন্দ্রনগরের ওই সংস্থায় প্রশিক্ষণের ‘অফার লেটার’ দেওয়া হয়। রকির স্কুলের কারিগরি বিভাগের শিক্ষক শ্রীকান্ত সেনাপতি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল থেকে কয়েক জনের নাম পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে দু’জন মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ডাক পেয়েছিলেন। তাঁদের জেলা থেকে যে অফার-লেটার দেওয়া হয়েছিল, সেখানে যোগ দিতেনিষেধ করা হয়। তার পরে আর কোনও খবর আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy