শ্রীরামপুর বাগবাজার রুটে এখনও একমাত্র বাস চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ গোস্বামী (বাঁ দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
এক কালে ৭০টি বাস চলত। বাসে চেপে শ’য়ে শ’য়ে যাত্রীদের কেউ স্কুল যেত, কেউ কলেজ যেতেন, কেউ বা অফিস। সে সব এখন অতীত। রুটে এখন দিনে একটি মাত্র বাস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চার বার চলে। খরচ বাঁচাতে বাসের মালিকই কন্ডাক্টর। অটো-টোটোর দৌলতে শ্রীরামপুর-বাগবাজার রুটে তিন নম্বর বাস এখন বন্ধ হওয়ার মুখে।
শ্রীরামপুর বাগবাজার রুটে এখনও একমাত্র বাস চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ গোস্বামী। একে একে বহু মালিক তাঁদের বাস তুলে নিয়েছেন। কিন্তু সুদীপ নাছোড়। বাস চালিয়ে লাভ কিছু হয় না। তেলের খরচই ওঠে না। উল্টে ঘর থেকেও মাঝেমধ্যে টাকা দিতে হয়। সুদীপের কথায়, ‘‘চোখের সামনে কত বাস বন্ধ হয়ে গেল। অনেক মালিক বাস তুলে নিয়েছেন।’’ তবু ২০১১ সালে কেনা বাস নিয়ে রোজ পথে নামবেনই সুদীপ। নিজেই চালান। দু’-এক জন যে যাত্রী ওঠেন, তাঁদের টিকিটও নিজেই কাটেন। আগে এই তিন নম্বর বাগবাজার পর্যন্ত চলত। যাত্রী হয় না বলে এখন দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত চালান। এত কিছুর পরেও কেন চালিয়ে যাচ্ছেন? সুদীপের কথায়, ‘‘চালাই, কারণ, মায়া পড়ে গিয়েছে। বাসের উপর। আর এই তিন নম্বর রুটের উপর।’’
কেন বাসে আগের মতো আর যাত্রী হয় না? চালকের দাবি, টোটোর দৌরাত্ম্যেই এই সঙ্কট। অল্প দূরত্ব যাওয়ার জন্য এখন আর কেউ বাস চাপতে পছন্দ করেন না। তাই মার খাচ্ছে বাস। তার উপর চাপ বাড়িয়েছে সরকারি নির্দেশ। সরকার প্রত্যেক বাসে বাধ্যতামূলক ভাবে ভেহিকল লোকেশান ট্রাকিং ডিভাইস বা ভিএলটিডি বসানোর নির্দেশ দিয়েছে। এর খরচ ১২ হাজার টাকা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বাসটি বিপদে পড়লে প্যানিক বাটন টিপে দিলে স্থানীয় পুলিশ জানতে পারবে। একটি অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশ সেই বাসকে খুঁজে নিয়ে সাহায্য করবে।
সরকারি নির্দেশ, ৩১ মার্চের মধ্যে সব বাসে ভিএলটিডি লাগাতে হবে। এ বার তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বাস মালিকেরা। যাত্রী হয় না। এত টাকা আসবে কী ভাবে? হুগলি জেলা বাস মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন দাস বলেন, ‘‘১৯২৭ সালের বাস রুট তিন নম্বর। সেই রুটে একটি মাত্র বাস চলছে। আর সেই বাসের মালিক নিজেই কনডাক্টরি করছেন। এতেই বোঝা যায় কতটা অসহায় অবস্থা বাস মালিকদের।’’ এর পরেই অভিযোগ করে রঞ্জন বলেন, ‘‘বাস শিল্পকে বাঁচানোর কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ নতুন অ্যাপ লাগাতে বলা হচ্ছে বাসে। তার জন্য সময় বে়ঁধে দেওয়া হয়েছে। বাস মালিকদের ক্ষমতা নেই ১২ হাজার টাকা খরচ করে ভিএলটিডি লাগানোর। আমরা এর জন্য আরও কিছুটা সময় চাই।’’ এই নিয়ে বাস মালিকরা শ্রীরামপুর বাস ট্রার্মিনাসে একটি সভাও করেন। যদিও তাতে সমস্যার সমাধান তেমন হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এক মাত্র তিন নম্বর বাসটিও কি বন্ধ হয়ে যাবে? উঠছে সেই প্রশ্নই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy