ব্যবস্থা: দ্বারকেশ্বর নদের উপর বোরো চাষের জন্য বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। খানাকুলের বেঁয়েজলা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
বোরো চাষের জন্য পর্যাপ্ত জল মিলছে না দ্বারকেশ্বর নদে। জল রয়েছে নামমাত্র। ফলে, বিপাকে পড়েছেন খানাকুলের চারটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরা। প্রায় ৬ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জলের ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন চাষিরা।
পঞ্চায়েত এবং ব্লক অফিসে একাধিকবার দরবার করেও কিছু হয়নি বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। তাঁরা জানান, বন্যাপ্রবণ এই এলাকায় আমন ধান চাষ হয় না। আলু এবং বোরো ধানই ভরসা। বোরো চাষের জন্য দ্বারকেশ্বর নদের জলই ভরসা। কংসাবতী ব্যারেজের ছাড়া জলের উপর নির্ভরশীল ওই নদ। নদ সংলগ্ন বিস্তৃর্ণ এলাকার জমিগুলিতে রবি এবং বোরো চাষে ভরসা সেই জল। এ বার রবি মরসুম থেকেই জল নেই। কিছু চাষি অবশ্য বেশি টাকা দিয়ে ব্যক্তি-মালিকানাধীন গভীর নলকূপের জল কিনে আলু চাষের কাজে লাগাচ্ছেন।
ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের নরেন্দ্রচক গ্রামের চাষি প্রশান্ত বেরার ক্ষোভ, ‘‘পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই করছে না। চাষে জল পাব কোথায়?’’ আবু হাসান নামে আর এক চাষি বলেন, ‘‘সাধারণত বাঁকুড়া বা তার উপরের দিকে বৃষ্টি না হলে কংসাবতী ব্যারাজ জল দিতে পারে না। এটা প্রশাসনের লোকেরা জানেন। তা সত্ত্বেও সময়ে বাঁধ না বাঁধাতেইএই বিপত্তি।’’
চাষিরা জানান, অতীতে নভেম্বর মাসের শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়ায় বোরো বাঁধ হয়ে যেত। বছর দুয়েক ধরে জানুয়ারির শেষে বোরো বাঁধ বাঁধা হচ্ছে। যখন নদীতে জল আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
বোরো চাষে জলের সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানরাও। খানাকুল-১ ব্লকের ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের প্রধান শীতল মণ্ডল বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাবির বিষয়টা ব্লক প্রশাসনে জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি।’’ একই ব্লকের ঘোষপুর পঞ্চায়েতের প্রধান হায়দার আলির অভিযোগ, “বছর কয়েক ধরে নদের জল শুকিয়ে গেলে জেলা পরিষদ থেকে আরামবাগের ডোঙ্গলের তেমোহনীতে মূল বাঁধটা বাঁধা হয়। বাঁধের পিছনে সরকারি টাকা খরচ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চাষিদের কোনও উপকার হচ্ছে না। জলের অভাবে জমি অনাবাদী থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”
খানাকুল-১ ব্লকের বিডিও শান্তনু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সেচের জলের বিষয়টি সেচ দফতর দেখবে। সেচ দফতরের মহকুমা বাস্তুকার দীনবন্ধু ঘোষ বলেন, “সাধারণত নদে বাঁধ বাঁধা বা সেখানে বেঁধে রাখা জল নিয়ে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। আমরা খালি নদীর স্রোত যাতে বাধা না পায়, সে জন্য বাঁধগুলি কেটে দিতে বলি।’’ সেচ দফতরের কংসাবতী-বিষ্ণুপুর ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার অঙ্কুর মিশ্র বলেন, “নদে জলের অসুবিধার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বলব।’’ বোরো বাঁধ সময়ে না বাঁধা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার মহাজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “জলের বিষয়টি সেচ দফতর দেখছে।”
খানাকুলের দু’টি ব্লকে বোরো বাঁধ হয় মোট ১১টি। খানাকুল-২ ব্লকের মুণ্ডেশ্বরী নদীতে চারটি, খানাকুল-১ ব্লকে দ্বারকেশ্বর নদে সাতটি। দুই পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি জল ছাড়ায় দামোদর নদ এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীতে বোরো জলের ঘাটতি নেই। খানাকুল-২ ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু দ্বারকেশ্বর সংলগ্ন আরামবাগের সালেপুরের কিছুটা অংশ এবং খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর-১ ও ২, ঠাকুরানিচক এবং ঘোষপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বোরো চাষ অনিশ্চিতহয়ে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy