—প্রতীকী চিত্র।
ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা যে একেবারে নেই, এমন নয়। কিন্তু এ বার এক ‘অন্য আরামবাগ’ দেখা যাচ্ছে।
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে মাস ঘুরতে চলল। শাসকদলের সন্ত্রাসে রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ঘরছাড়া হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু যে আরামবাগে পরাজিত বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঘরছাড়া হওয়াই কার্যত দস্তুর ছিল এত দিন, এ বার তেমন চিত্র বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।
আরামবাগ লোকসভা আসনে জিতেছে তৃণমূল। তারপরেও বিরোধী দল সিপিএম মানছে, গোটা মহকুমায় তাদের এক জনও ঘরছাড়া নেই। বিজেপি বলছে, তাদের জনা কুড়ি কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া থাকলেও তাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারি এড়াতেই তাঁরা বাইরে থাকছেন। ‘সন্ত্রাস’ দেখা প্রবীণ গ্রামবাসীদের অনেকেরই দাবি, এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর বেশি দিন উপস্থিতি, পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলগুলির সক্রিয়তায় আগের পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে। কোথাও কোনও গোলমাল হলেই পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী হাজির হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যা আগে সে ভাবে দেখা যেত না।
বিভিন্ন দলের বর্ষীয়ান নেতারা জানান, ভূমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরামবাগে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, খুন-জখম এবং ঘরছাড়া করার অধ্যায়ের শুরু সেই ষাটের দশকে। ভোটকে কেন্দ্র করে বাম আমলে ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে মূলত গোলমাল হত। তৃণমূলের ক্ষমতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা পাল্টাতে থাকে। এর
সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও যুক্ত হয়। যার জেরে ঘরছাড়া হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে।
১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত শুধু আরামবাগ শহরের বিভিন্ন তৃণমূল নেতার বাড়ি বা দলীয় কার্যালয়গুলিতে গোঘাট, খানাকুল, পুরশুড়া এবং আরামবাগের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার তিন-চারেক ঘরছাড়া ছিলেন বলে অভিযোগ। রাজ্যে পালাবদলের পরেও ছবিটা পাল্টায়নি। পাল্টে যায় শুধু ঘরছাড়াদের রাজনৈতিক পরিচয়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে আরামবাগের চারটি বিধানসভায় বিজেপি জিতলেও রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের জয়জয়কারে ফের গেরুয়া শিবিরের বহু নেতা-কর্মী ঘরছাড়া হন বলে অভিয়োগ উঠেছিল।
এ বার এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাসের কারণে ঘরছাড়া থাকার অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। দলের নেতা, কর্মী-সমর্থকদের কেউ যাতে ভয়ে গ্রাম থেকে অন্যত্র চলে না যান, তা নিশ্চিত করতে বিজেপি নেতৃত্ব মাঠে নেমেছেন। বিজেপির তিন বিধায়ক— আরামবাগের মধুসূদন বাগ, গোঘাটের বিশ্বনাথ কারক এবং খানাকুলের সুশান্ত ঘোষ আরামবাগের আরান্ডি ১ ও ২ অঞ্চলে দলের ভীত-সন্ত্রস্ত কর্মীদের বাড়িতে গিয়েছেন ইতিমধ্যে। মধুসূদন বলেন, ‘‘দু’টি পঞ্চায়েতে আমাদের জনা চারেক কর্মী ঘরছাড়া। এক জনের দোকান খুলতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ সন্ত্রস্তদের পাশে থাকার পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিষয় পুলিশের নজরে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির
সদস্য তথা মহকুমার প্রবীণ নেতা অসিত কুন্ডু।
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা রাজ্য সম্পাদক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘এ বার আমাদের ঘরছাড়া প্রায় নেই। অধিকাংশ অশান্তির মোকাবিলা স্থানীয় মানুষই করছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশও সক্রিয়।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, আরামবাগের বাসিন্দা পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ভোট কম থাকায় শাসকদল হয়তো ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি।’’
তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি পলাশ রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা আগেও কাউকে ঘরছাড়া করিনি। এ বারও নয়। আমরা এ নিয়ে ভাবছিও না। মানুষের আরও উন্নয়নের পরিকল্পনায় আমরা ব্যস্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy