Advertisement
E-Paper

জিআই তকমা আদায়ের চেষ্টায় বলাগড়ের নৌ-শিল্প

জিআই তকমার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন নৌকা-কারখানা সরেজমিনে দেখেছেন। কথা বলেছেন কারিগরদের সঙ্গে।

বলাগড়ের রাজবংশীপাড়ায় তৈরি হচ্ছে নৌকা। নিজস্ব চিত্র

বলাগড়ের রাজবংশীপাড়ায় তৈরি হচ্ছে নৌকা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৮
Share
Save

সে দিন আর নেই হুগলির বলাগড়ের নৌ-শিল্পের। ব্যবসার গাঙ এখন মরা। কারিগররা চিন্তায় শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে এখানকার নৌ-শিল্পের জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) স্বীকৃতি আদায়ের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অনেকের ধারণা, তকমা পেলে গঙ্গাপাড়ের এ তল্লাটে নৌ-শিল্পের হারানোস্রোত ফিরবে।

জিআই তকমার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন নৌকা-কারখানা সরেজমিনে দেখেছেন। কথা বলেছেন কারিগরদের সঙ্গে। গবেষকরা বলছেন, শিল্পের ইতিহাস, সমৃদ্ধি, এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোয় এর ভূমিকা, এলাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব, সময়ের প্রবহমানতায় এর টিকে থাকা— আবেদনের ক্ষেত্রে সবটাই বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হবে।

তকমা পেলে ধুঁকতে থাকা শিল্পের লাভ কী হবে?

জিআই নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্বজিৎ বসু। তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে নাম হবে। ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ভিন্‌ দেশে নৌকো পাঠানোর রাস্তা তৈরি হতে পারে।’’ তিনি জানান, প্রক্রিয়া প্রাথমিক স্তরে আছে। প্রশাসনিক নথি তৈরির কাজ চলছে। সরকারি ভাবে গবেষণার কাজে প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত পিনাকী ঘোষও বলাগড় ঘুরে গিয়েছেন।

বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ কলেজের শিক্ষক তথা আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বহু বছর ধরে এখানকার নৌ-শিল্প নিয়ে চর্চা করছেন। জিআই-এর জন্য বিভিন্ন বই, নথি তিনি প্রশাসনকে দিয়েছেন। পার্থ জানান, গঙ্গাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছিল। কাছেই সপ্তগ্রাম বন্দর ছিল। তখন থেকেই এই শিল্পের সমৃদ্ধি। বাণিজ্য, মাছ ধরা, যাতায়াত তো বটেই, ডাকাতরা জলপথে ডাকাতি করতে যাওয়ার জন্যেও নৌকা কিনত। এখানে নৌকাকে কেন্দ্র করে ছড়া, গান, প্রবাদ— কিছুর অভাব নেই। এই ব্লকের প্রাচীন মন্দিরে টেরাকোটার কাজেও রয়েছে নৌকা। বলাগড়বাসীর দৈনন্দিন জীবনে নৌকা কী ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল, এতেই স্পষ্ট।

পার্থর দাবি, এখানে নৌকা তৈরি হত ‘জোড় বাঁধা’ (একটি কাঠকে অন্য কাঠের সঙ্গে বিশেষ ভাবে জুড়ে, তাপ দিয়ে বেঁকানো) পদ্ধতিতে। পেরেকের দরকার হত না। এখন অবশ্য পেরেকের ব্যবহার হয়।

শ্রীপুর, রাজবংশীপাড়া, চাঁদরা, তেঁতুলিয়ায় নৌকো-কারখানা আছে। বাবলা, জিলিপি, সুবাউল, শিরীষ, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি হয়। দামের জন্য শাল-সেগুনের দিকে কেউ যান না। এখানকার নৌকা পশ্চিমবঙ্গেরবিভিন্ন জেলা বাদেও আশপাশের রাজ্যেও যায়।

তবে, শিল্পে মন্দা দীর্ঘদিন। এক সময় গোটা ষাটেক কারখানা ছিল। এখন ৩৫-৪০। রাজবংশীপাড়ায় বৃদ্ধ শেখ আসরাফুলের কারখানায় চার জন শ্রমিক। তিনি নিজে, ছেলে কুতুবউদ্দিনও কাজ করেন। তাঁরা জানান, মাসে ১০-১২টি নৌকা হয়। বর্ষায় কিছু বেশি। তবে, লাভ তেমন নেই। কারিগর সংসার চলার মতো মজুরি পান না।

কারিগরদের আক্ষেপ, কখনও গুদাম তৈরি বা সরঞ্জাম দেওয়া, কখনও হাব তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রশাসন। হয়নি কিছুই। বর্তমান প্রজন্ম এই শিল্পে ঘেঁষছে না। প্রৌঢ় কারিগর কৃষ্ণচন্দ্র মাঝি জানান, আকার এবং কাঠ অনুযায়ী নৌকার দাম ১২-১৫ হাজার থেকে এক-দেড় লক্ষ টাকা। কারিগরের মজুরি দিনে ৩০০-৪০০ টাকা। কৃষ্ণচন্দ্রের কথায়, ‘‘খাটনি অনুযায়ী মজুরি নেই। ছুটি, বোনাস নেই। কাজ জানা অনেকে দিঘা, শঙ্করপুর, ওড়িশায় চলে গিয়েছেন।’’

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা চান, শিল্পের গঙ্গায় ফের বান আসুক।

Balagarh Boats GI Tag

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।