জিরাট কলোনি হাই স্কুলের মাঠে চলছে ফুটবল অনুশীলন। —নিজস্ব চিত্র।
না আছে জুতসই মাঠ, না অন্য পরিকাঠামো! বহু ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় সংসারের অনটনও। সে সব অতিক্রম করেই বিভিন্ন খেলায় এগিয়ে চলেছে বলাগড় ব্লকের ছেলেমেয়েরা। সাফল্য আসছে প্রতিবন্ধী ক্রীড়াতেও। শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন চার ‘দ্রোণাচার্য’।
সম্প্রতি রাজ্য অ্যাথলেটিক্সে অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জেতে প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। ১০০ মিটারে অন্বেষা ঘোষ রুপো পায়। চলতি বছরেই প্যারা সুইমিংয়ে ৫০ ও ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল এবং ৫০ মিটার ব্যাক স্ট্রোকে স্বর্ণপদক এসেছে অন্বেষা দাসের ঝুলিতে। ২০২২ সালে জাতীয় ভলিবলে ব্রোঞ্জজয়ী বাংলার মেয়েদের দলে ছিল বলাগড়ে পায়েল দেবনাথ। সে বছরই আমদাবাদে জাতীয় গেমসের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন আদিবাসী পরিবারের তিন সন্তান দীপেশ মূর্মূ, বাসুদেব মান্ডি এবং তারক হেমব্রম। ২০১৭ সালে রাজ্য স্কুল গেমসে অনূর্ধ্ব ১৪ বয়সের ২০ মিটার দৌড়ে সোনা পায় অঞ্জু বর্মণ।
সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। কিন্তু বড় আসরে বাজিমাত করতে যে সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন হয় অনুশীলনের জন্য, সেই পরিকাঠামো কতটুকু আছে বলাগড়ে?
জিরাটের উত্তর গোপালপুর বনশ্রী ক্লাবের এবড়োখেবড়ো মাঠে চলে দৌড়। এক কোণে বালি ফেলে হয় লং জাম্পের প্রশিক্ষণ। জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের দিকে তাকালেই মালুম হয়, তা খেলার কতটা অনুপযুক্ত! যদিও সেখানে ফুটবলের কারিকুরি শেখে ছোটরা। সোমড়ার ভক্তি সঙ্ঘের মাঠে ভলিবল অনুশীলন হয়। পরিকাঠামোর খামতি সেখানেও। গোটা ব্লকে একটিও সুইমিং পুল নেই। সাঁতারুদের ভরসা জিরাট হাটতলার পুকুর। যে পুকুরে মানুষ স্নান করেন, যে জলে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়— সেখানেই ফ্রি স্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক শেখা চলে। এ হেন পরিকাঠামোতেও গত কয়েক বছরে দৌড়, লং জাম্প, হাই জাম্প, ভলিবল, সাঁতারে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সাফল্য এসেছে।
অ্যাথলেটিক্স কোচ পবন পণ্ডিত জানালেন, খেলার প্রতি টানে এবং অভাবী ঘরের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে জিরাটে কোচিং অ্যাকাডেমি খুলেছিলেন। এখন শিক্ষার্থী ১০৩ জন। জিরাটে আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার অচিন্ত্য দত্তের কাছে শিক্ষার্থী ৭৫ জন। সকলেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। ভক্তি সঙ্ঘে সুজয় দাসের কাছে ভলিবল শেখে ৮০ জন। জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল শেখান দীপঙ্কর শিকদার।
প্রত্যেকেই কার্যত নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেন। ছাত্রছাত্রীর সংসারের হাল বুঝে জুতো, পোশাক সহ নানা সরঞ্জামও কিনে দিতে হয়। অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খোলাখুলি স্বীকার করলেন, ওই কোচেরা না থাকলে মাঠ কামড়ে ছেলেমেয়েদের পড়ে থাকা কার্যত স্বপ্ন। চার কোচেরই বক্তব্য, তাঁরা চান না অর্থের অভাবে কোনও প্রতিভা হারিয়ে যাক। তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেকেই টাকার অভাবে উন্নত সরঞ্জাম কিনতে পারে না। সার্বিক ভাবে পরিকাঠামোর অভাব তো আছেই। এই সমস্যা দূর হলে ফল আরও ভাল হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
হুগলি জেলা পরিষদের সভাপতি রঞ্জন ধারা জানান, বলাগড়ের খেলোয়াড় বা কোচরা পরিকাঠামো তৈরির আবেদন করলে বিষয়টিদেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy