প্রতিবাদ এলাকাবাসীর। সোমবার সকালে আরামবাগের মান্দরা এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয়দের বাধায় ফের আটকে গেল আরামবাগ পুরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প তৈরির কাজ। পাশের তিরোল পঞ্চায়েতের মান্দরা গ্রাম সংলগ্ন জায়গায়, খাসজমিতে ওই প্রকল্প তৈরি হওয়ার কথা। সোমবার সকালে সেখানে ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। দূষণ এবং খেলার মাঠ নষ্টের অভিযোগ তুলে লাগোয়া আরামবাগ-বর্ধমান রোড অবরোধ করা হয়। পুলিশ গিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরে কাজ বন্ধ রাখা হলে অবরোধ ওঠে। আটক কর্মীরা ছাড়া পান।
আরামবাগ শহরের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনিক হয়নি। এখনও ভাগাড়ই ভরসা। ফলে, পরিবেশ দূষণ বাড়ছেই। আখেরে সমস্যা বাড়ছে মানুষের। সম্প্রতি ‘নোংরা শহর’ হিসাবে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণে দেশের ১ লক্ষের কম জনসংখ্যার ৩৯৭০টি শহরের মধ্যে শেষ একশোর মধ্যে ঠাঁই হয়েছে ১৯ ওয়ার্ডের আরামবাগ পুরসভার। এই পরিস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প তৈরিতে পদে পদে বাধা নিয়ে চিন্তায় পুর-কর্তৃপক্ষ।
পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী বলেন, ‘‘রাজ্য নগর উন্নয়ন সংস্থা (সুডা) এই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু বার বার অন্যায় ভাবে কাজে বাধা দিচ্ছেন সেখানকার মানুষজন। শহর এবং সংলগ্ন পঞ্চায়েতগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি রূপায়ণে বিলম্ব হচ্ছে।’’ তাঁর খেদ, মাস তিনেক আগে স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টির মীমাংসা হলেও ফের বাধা পড়ল। এ বার পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গ্রামবাসীদের নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে পুরপ্রধান জানান।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মান্দরা মৌজায় ১ একর ৬৬ শতক জমিটি পুরসভার। সেখানে প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয় ২০২২ সালে মাঝামাঝি। ওই বছর নভেম্বর মাসের গোড়ায় সরেজমিনে তদন্তের পরে প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয় ‘সুডা’। সীমানা-পাঁচিল আগেই দেওয়া হয়েছিল। তবে, মাটি পরীক্ষার দিন থেকে দফায় দফায় সংলগ্ন তিনটি গ্রাম মান্দরা, বাইশ মাইল এবং দাদনপুরের মানুষজন বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
ইতিমধ্যে নির্মাণের জন্য ইট-বালি-পাথর ইত্যাদি সরঞ্জাম ফেলা হয়। সোমবার ফটকে ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ সংক্রান্ত ফলক লাগানোর সময়েই গ্রামবাসীরা এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, ফলক খুলে ভেঙে ফেলা হয়। শ্রমিকদের আটকে রাখা হয়।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শেখ আজাহারাউদ্দিন, শেখ ফজলুল হকদের অভিযোগ, পাশাপাশি ৬-৭টি গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠে ওই প্রকল্প করা হচ্ছে। তাতে খেলাধুলো যেমন বন্ধ হবে, তেমনই পচা আবর্জনায় আশপাশের গ্রামগুলি দূষিত হবে। পাশেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের জলাধারের সঙ্গে পাইপ লাইন আছে। সেই জলও দূষিত হওয়ার আশঙ্কা। তাঁদের দাবি, বছর খানেক ধরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও হয়নি।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য মানিক পাঁজা বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময়েই বলেছিলাম, গ্রামবাসীদের সঙ্গে যেন সরাসরি কথা বলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। আমরা গ্রামবাসীদের ভোটে জিতেছি। আমাদের পক্ষে গ্রামবাসীদের বোঝানো সম্ভব নয়। ওই প্রকল্পে পঞ্চায়েত এলাকার ১৫-২০ জন গ্রামবাসীকে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও তা নিয়ে কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি নেই। সব মিলিয়ে জটিলতা কাটছে না।’’
জট কাটার উপরে নির্ভর করছে জনপদের স্বচ্ছতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy