২০২২ সালে বিগ বস (উপরে)। ২০১৯-এ বিগ বস (নিচে)। ছবি: সংগৃহীত।
বছর তিনেক আগে, শীতকালের এক ফুরিয়ে আসা বিকেলে শেষ বার দেখা মিলেছিল তার। আমলামেথির খালে জেলে নৌকা থেকে মাঝিরা নিশ্চুপে প্রণাম করেছিলেন— ‘‘গড় হই গো দক্ষিণ রায় (সুন্দরবনের মানুষ বাঘের প্রতিশব্দ হিসেবে এ নামেই স্বচ্ছন্দ)!’’
তবে, আদরের একটা নামও ছিল তার। সুধন্যখালি থেকে দোবাঁকির জঙ্গলে অগুন্তি পর্যটকের সামনে প্রায় বারো বছর ধরে সুঠাম চেহারা আর দরাজ হুঙ্কার তাকে পরিচিত করেছিল ‘বিগ বস’ নামে। বন দফতরের খাতাতেও তার নথিভুক্তি ঘটেছিল ওই ডাকনামেই।
বাঘের গড় আয়ু ১৪ থেকে ১৬ বছর ধরলে, ২০১৯ সালে শেষ দর্শনের সময়ে তার বয়সও তখন প্রায় নিভে এসেছে। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ না-থাকলেও দীর্ঘদিন ‘বিগ বস’-এর অদর্শনে গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্তারাও ধরে নিয়েছিলেন, বাদাবনের অন্দরে পরিণত বয়সেই নিভৃতে ফুরিয়ে গিয়েছে ‘বিগ বস’।
তবে সব অনুমান আর অদর্শনের হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে শুক্রবার এক স্কুল শিক্ষকের ভিডিয়ো ক্যামেরার ছবি। এক ঝাঁক স্কুল পড়ুয়ার সঙ্গে সুন্দরবনের ঝিলার জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে ওই শিক্ষকের তোলা সেই ভিডিয়োয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নদী থেকে অবলীলায় ডাঙায় টেনে তুলছে একটি বাঘ। সে অন্য কেউ নয়, খোদ ‘বিগ বস’। যা দেখে সুন্দরবনের মানুষের মতো বাঘ বিশেষজ্ঞদেরও ঘোর কাটছে না। ‘বিগ বস’ তা হলে বেঁচে আছে!
বাঘ বিশেষজ্ঞ তথা বন বিভাগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়দীপ কুণ্ডুর বিস্ময়, ‘‘হিসেব মতো বিগবসের এখন ১৯ বছরের বেশি বয়স। বন্য অবস্থায় বাঘের এত দীর্ঘ আয়ু দেখা যায় না। অবাক করছে এই বয়সে তার শারীরিক শক্তিও!’’ বাদাবনের জল-জঙ্গলে টিঁকে থাকার লড়াই সত্ত্বেও প্রান্তিক বয়সে এমন তারুণ্যের শক্তি সে ধরে রাখল কী করে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। বাঘ বিশেষজ্ঞ উল্লাস করন্থ বিস্মিত, ‘‘ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে বাঘের এত দীর্ঘ আয়ু ভাবাই যায় না।’’ বাঘ সংরক্ষণে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটির ডিরেক্টর এস পি যাদবের কথায়, ‘‘বন্য জীবনে ১৯ বছর বাঘ সচরাচর বাঁচে না। ঘটনাটি সত্যি হলে বিস্ময়কর!’’
দীর্ঘায়ু বাঘের নজির যে একেবারে নেই, তা অবশ্য নয়। রনথম্ভোর অভয়ারণ্যের ‘মছলি’ নামের বাঘিনী বেঁচে ছিল প্রায় কুড়ি বছর। কুমিরের কামড়ে একটি পা খুইয়ে সুন্দরবনের ‘রাজা’ নামের যে বাঘটির শেষতক ঠাঁই হয়েছিল উত্তরবঙ্গের খয়েরবাড়ি উদ্ধার কেন্দ্রে। চলতি বছর সে মারা যায় প্রায় ২৬ বছর বয়সে। জয়দীপ ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘তবে, মনে রাখতে হবে, এদের শেষ বয়সটা কিন্তু কেটেছিল বন্দি-জীবনের নিশ্চয়তায়। বন্য জীবনের খাওয়া-থাকার লড়াইয়ের ঝক্কিটা তাদের পোহাতে হয়নি। মনে রাখতে হবে, চিড়িয়াখানা কিংবা ব্যক্তিগত পোষ্য হিসেবে বাঘের জীবনকাল প্রলম্বিত হতে দেখা গিয়েছে। সেই স্বাচ্ছন্দ্যটা কিন্তু বন্য জীবনে নেই।’’
এখানেই ‘বিগ বস’ স্বতন্ত্র্য। দেশের ব্যাঘ্র-বিশেষজ্ঞ মহলে যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে— বন্য জীবনে, আয়ুষ্কালের নিরিখে ‘বিগ বস’ কি প্রবীণতম?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy