হাওড়া পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
পুরসভার অনুমোদিত নকশায় থাকছে গ্যারাজ। অথচ নির্মাণের পরে তা হয়ে যাচ্ছে দোকান বা শোরুম। হাওড়া জুড়ে বেআইনি নির্মাণের পাশাপাশি, নকশার এই অদলবদলের এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে আসায় এ বার নড়েচড়ে বসেছে হাওড়া পুরসভা। এই ভাবে নির্মাণস্থল ‘ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারযোগ্য’ (ডোমেস্টিক) থেকে ‘বাণিজ্যিক’ (কর্মাশিয়াল) হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভার লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ার বা এলবিএসদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্য পুরসভার সমস্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত এলবিএসদের নিয়ে চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসতে চলেছে হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলী।
গার্ডেনরিচের নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল ভেঙে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া পুরসভাও অবৈধ নির্মাণ রুখতে কঠোর হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরসভা বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার পরে তা ফের মেরামত করে নেওয়া বাড়িগুলির তালিকা তৈরি করেছে। পুরসভার ডিসপ্লে বোর্ডে ও ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও করছে। ওই সব বাড়ি বা বহুতলের মালিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায় কি না, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। লোকসভা নির্বাচন মিটলেই ওই সব বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, শুধু অবৈধ ভাবে নির্মাণ করাই নয়। পুরসভাকে ফাঁকি দিয়ে এলবিএসদের করা নকশায় বদল ঘটিয়ে পার্কিং বা গ্যারাজের জন্য অনুমোদিত জায়গায় তৈরি হচ্ছে দোকানঘর বা শোরুম। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তৈরি করা গ্যারাজের জায়গায় দোকানঘর করে তা বাণিজ্যিক ভাবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। যার ফলে ট্রেড লাইসেন্স ফি-সহ ভ্যালুয়েশন বৃদ্ধির লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে পুরসভার। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের ঘটনার কয়েক হাজার অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে।
হাওড়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, শুধু বাড়ি বা বহুতলের নকশা করে দেওয়ার পরে হাওড়ায় এলবিএসদের আর কোনও ভূমিকা থাকছে না। নকশা অনুযায়ী বাড়ি হচ্ছে কি না, তা তাঁরা দেখছেন না। অন্য দিকে, এই সুযোগে অবৈধ বহুতল গড়ে উঠছে, গ্যারাজ হয়ে যাচ্ছে দোকানঘর। এই প্রবণতা বন্ধ করতেই এলবিএস, বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের নিয়ে আলোচনায় বসা হচ্ছে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, পুরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত এলবিএসদের যোগ্যতার মান না দেখে কয়েক জনকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে তাঁদের তৈরি করা নকশায় পাঁচতলা বহুতল হলে তার কাঠামোগত স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে এ বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তা তদন্ত করে চিহ্নিতও করা হবে। এর পাশাপাশি, বহুতলের মালিক বা প্রোমোটারেরা নকশা অনুমোদনের পরে এলবিএসদের সঙ্গে কেন কোনও লিখিত চুক্তি করেন না, তা নিয়েও আলোচনা হবে ওই বৈঠকে।
তবে হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলবিএস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের এখানে কোনও অনুমোদিত নকশা ছাড়াই চার ফুট রাস্তায় ছ’তলা, সাততলা বাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কার ঘাড়ে দোষ দেবেন? তাই সবই এলবিএসদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাট তৈরি করতে দেড় থেকে পাঁচ বছর লাগতে পারে। ওই সব বহুতল নকশা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য এক জন এলবিএসের পক্ষে কি পাঁচ বছর ধরে ঘোরা সম্ভব? পুরসভাকে এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করে ব্যবস্থা
নিতে হবে।’’
এলবিএস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদকের দাবি, যদি দ্বিতীয় শ্রেণির এলবিএসদের উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করে দেওয়া হয়, তবে তার
দায় পুরসভার। তদন্ত হলেই সেটা বোঝা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy