—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে তৈরি চলছিল টানাপড়েন। তার জেরে ‘প্রেমিক’কে অ্যাসিড ছুড়ে খুনের দায়ে জাঙ্গিপাড়ার আরতি বারিক নামে এক মহিলাকে শনিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল শ্রীরামপুর আদালত।
গত শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (দ্বিতীয় কোর্ট) নাইয়ার আজম খান আরতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ৯ বছর আগে। নিহতের নাম শক্তিকুমার রায়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৫০ বছর।
মামলার তথ্যে জানা গিয়েছে, শক্তিকুমার থাকতেন জাঙ্গিপাড়ার লক্ষণপুর গ্রামের কোষপোতা রায়পাড়ায়। রাতে ঘুমোতেন একটি আশ্রমে। ২০১৫ সালের ১৪ জুন রাতে ওই আশ্রমের বারান্দায় শুয়ে থাকার সময় আরতি তার গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে পালায়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে শক্তিকুমার বাড়িতে গিয়ে জানান, আরতি তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়েছে। শক্তিকুমারকে জাঙ্গিপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই ওই বছরের ১৮ জুন তিনি মারা যান।
অ্যাসিড-হামলার পরের দিন শক্তিকুমারের ছেলে জয়ন্ত জাঙ্গিপাড়া থানায় আারতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ। শক্তিকুমারের মৃত্যুর পরে খুনের ধারা যোগ করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে পুলিশের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন শক্তিকুমার।
মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, গ্রেফতার হওয়ার পরে আরতি জামিন পায়নি। তার 'কাস্টডি ট্রায়াল' (হেফাজতে থাকা অবস্থায় শুনানি) হয়। মামলায় উঠে আসে আরতির সঙ্গে শক্তিকুমারের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের অবনতির জেরেই আরতি এই কাণ্ড ঘটায়। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন অমলকুমার মণ্ডল। শক্তিকুমারের লুঙ্গি এবং যে মাদুরে তিনি শুয়েছিলেন, সেটিও অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছিল। সেগুলি এবং ঘটনাস্থল থেকে অ্যাসিডের নমুনাও সংগ্রহ করে পুলিশ। আরতিকে হেফাজতে নিয়ে জগৎবল্লভপুরে তাঁর এক পরিচিতের বাড়ি থেকে অ্যাসিডের বোতল উদ্ধার করা হয়।
সংগৃহীত নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়। বোতলের অ্যাসিড এবং ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা অ্যাসিডের নমুনা সালফিউরিক বলে ফরেন্সিক পরীক্ষায় রিপোর্ট আসে। এই সমস্ত প্রমাণ ও শক্তিকুমারের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়। মোট ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। তার মধ্যে নিহতের ছেলে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, এনআরএসের চিকিৎসক, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকও ছিলেন।
শনিবার রায় ঘোষণার আগে বিচারক আরতিকে বলেন, সে যে অপরাধ করেছে, তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বিচারক এই ব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়ে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানায়। সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, মহিলার বয়স এখন ৬২ বছর। সে ইতিমধ্যে ১০ বছর হাজতবাস করছে। এই বিষয় বিবেচনা করে তাকে সর্বনিম্ন সাজা দেওয়া হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy