Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Homeless Women

প্রতিবেশীদের ‘ফতোয়া’, বিপাকে মহিলা ও নাবালিকা

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনমজুরি করে তফসিলি জাতির ওই পরিবারের সংসার চলে। নাবালিকা মামারবাড়িতেই থাকে। গত ১৭ এপ্রিল বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় ওই নাবালিকা ও তার মামিমা।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৯:১৬
Share: Save:

‘রাগ করে’ ঘর ছেড়েছিলেন এক মহিলা এবং তাঁর ননদের নাবালিকা মেয়ে। দিন তিনেক পরে দু’জনেই ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁরা ভিন্‌ ধর্মের পুরুষদের সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন, এই দাবি তুলে পড়শিদের একাংশ আপত্তি জানানোয় তাঁরা ঘরে থাকতে পারছেন না বলে অভিযোগ। নবম শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরীর পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে হুগলি জেলার আরামবাগের ওই পরিবার।

প্রতিবেশীদের ওই ‘ফতোয়া’য় এলাকায় প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ওই মহিলা এবং নাবালিকা যাতে নিজেদের ঘরে সসম্মানে থাকতে পারেন, পুলিশ-প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করুক। মহকুমাশাসক (আরামবাগ) সুভাষিণী ই’র আশ্বাস, ‘‘ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সমস্যা থাকবে না।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনমজুরি করে তফসিলি জাতির ওই পরিবারের সংসার চলে। নাবালিকা মামারবাড়িতেই থাকে। গত ১৭ এপ্রিল বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় ওই নাবালিকা ও তার মামিমা। দু’দিন খোঁজাখুঁজির পরেও তাঁদের না পেয়ে ১৯ এপ্রিল থানার দ্বারস্থ হয় পরিবার। পরের দিন দু’জনে ফিরে আসেন। অভিযোগ, তাঁরা ফিরতেই পড়শিদের একাংশ আপত্তি তোলেন। তাঁদের বাড়িতে রাখা যাবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। অশান্তির খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন আদালতের নির্দেশে নাবালিকাকে হোমে পাঠানো হয়। মহিলাকে স্বামীর হাতে তুলে দেয় আদালত।

তবে ওই পরিবারের অভিযোগ, পড়শিদের বাধায় মহিলা বাড়িতে ঢুকতে পারেননি। এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি অন্যত্র থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। গত শুক্রবার নাবালিকা হোম থেকে ছাড়া পেলে সে এবং তার মামিমা ফের বাড়ি যান। কিন্তু প্রতিবেশীদের বাধায় ফের বাড়ি ছাড়তে হয়। সেই দিনই ওই পরিবারের তরফে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান নাবালিকার মা। বুধবার তাঁর ভাই, অর্থাৎ, বাড়ি ঢুকতে না পারা মহিলার স্বামী হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার, এসডিপিও (আরামবাগ) এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও অভিযোগপত্র পাঠান।

এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ হাতে পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে থানা সূত্রের দাবি, সমস্যা আগেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনও সমস্যার অভিযোগ নেই।

যদিও মহিলার স্বামীর দাবি, ‘‘আমার স্ত্রী ও ভাগ্নি রাগ করে বাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তারা অন্য ধর্মের লোকের সঙ্গে রাত কাটিয়েছে, এই অপবাদ দিয়ে প্রতিবেশীরা ওদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। এলাকা শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ তাদের বাইরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।’’ ওই পরিবারের আবেদন, ওই দু’জনকে সুষ্ঠু ভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিক প্রশাসন। কিশোরী যাতে পড়াশোনা চালাতে পারে, তা নিশ্চিত করা হোক।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশীরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। আরামবাগের বর্ষীয়ান সিপিআই নেতা তথা সমাজসেবী শম্ভু ঘোষ বলেন, ‘‘সমস্যা মেটাতে ওখানে সমস্ত স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি, মানুষ বুঝবেন। আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলেও বিশ্বাস।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Arambagh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy