Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Fraud

খাবারের টাকা ‘চুরি’, তদন্তের উদ্যোগ লিলুয়া হোমের বিরুদ্ধে

এর আগে আবাসিকদের উপরে চলা নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও গোলমাল হয়েছে।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

আবাসিকদের খাবারের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে চুরির অভিযোগ উঠেছে বেলুড়ের লিলুয়া হোমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাজ্য সরকার আবাসিকদের ভরণপোষণের জন্য যে টাকা পাঠায়, তার একটি অংশ চলে যাচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পকেটে। ফলে খাবারের মান থেকে পরিমাণ— আপস করা হচ্ছে সব কিছুর সঙ্গেই। পেট ভরে খেতে না পেয়ে হোমের রান্নাঘরে গিয়ে প্রায়ই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আবাসিকেরা। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, মুখে তোলা যায় না, এমন খাবারই দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। যা খেয়ে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর অসুস্থ হলেও চিকিৎসার নামে প্রহসন চলছে বলেও অভিযোগ। আবাসিকদের দাবি, প্রতিবাদ করলে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

লিলুয়া হোমের অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এর আগে আবাসিকদের উপরে চলা নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও গোলমাল হয়েছে। এ বার হোমের ভিতরে সরকারি বরাদ্দের টাকা চুরি যাওয়ার অভিযোগ ওঠায় টনক নড়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসনের। ঠিক হয়েছে, মহিলাদের নিয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করে হোমে পাঠানো হবে।

সূত্রের খবর, লিলুয়া হোমে বর্তমানে প্রায় ২০০ জন আবাসিক রয়েছেন। তাঁদের এক-এক জনের খাবার, চিকিৎসা ও পোশাক বাবদ প্রতি মাসে ১৪০০ টাকা করে বরাদ্দ, যা সরকারি তরফে পাঠানো হয়। অর্থাৎ, মাথা-পিছু দৈনিক ৪৬ টাকা ৬৬ পয়সার মতো। সরকারি এই বরাদ্দ যে যথেষ্ট নয়, প্রশাসনের কর্তারাও তা মানছেন।

কী থাকে হোমের সরকারি মেনুতে?

জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রত্যেক আবাসিকের জন্য সকালে বরাদ্দ এক কাপ চা ও দুটো বিস্কুট। জলখাবারের কোনও পাট নেই। দুপুরের খাওয়ায় বরাদ্দ ১৭০ গ্রাম চালের ভাত। এর সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন মাংস, দু’দিন মাছ, দু’দিন ডিম ও বাকি দু’দিন সয়াবিনের তরকারি। দুপুরে খাবারের সঙ্গে থাকে ডালও। বিকেলে বেশির ভাগ দিনই জোটে শুকনো মুড়ি। রাতে ১৩০ গ্রাম চালের ভাত, ডাল আর একটা তরকারি।

আবাসিকদের অভিযোগ, বর্তমানে দুপুরে দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৭০ গ্রাম চালের ভাত, জলের মতো ডাল, আর সপ্তাহে দু’দিন ২০-৩০ গ্রাম মাছ। চালের মান নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। সপ্তাহে এক দিন যে মাংস দেওয়া হয়, তা-ও ৩০ গ্রামের মতো। অভিযোগ, খাবারের পরিমাণ তো কমেইছে, আপস করা হচ্ছে মানের সঙ্গেও। ভাতের পরিমাণ এতটাই কম যে, পেট ভরছে না কারও।

লিলুয়া হোমের এক আবাসিকের আত্মীয় বললেন, ‘‘হোমের চার দেওয়ালের ভিতরের কথা বাইরে বেরোতে পারে না। কারণ, আবাসিকদের ভয় দেখিয়ে রাখা হয় যে, এ সব কথা বাইরে বেরোলে তাঁরা ছাড়া পাবেন না। এই ভয়ে ওঁরা আমাদের কিছু বলতেও ভয় পান।’’

বর্তমানে ওই হোমে ২৫-৩০ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মহিলা রয়েছেন, যাঁরা বেশির ভাগই দেহ ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগে ধরা পড়েছিলেন। এঁদের অনেকে চার-পাঁচ বছর ধরে সেখানে আটকে থাকলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে দেশে ফিরতে পারছেন না। অভিযোগ, ওই আবাসিকেরা অনেকেই দিনের পর দিন সুষম ও পরিমাণ মতো খাবার না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঠিক মতো চিকিৎসাও হচ্ছে না।

এমনটা যে হতে পারে, তা মানছেন খোদ সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তিনি বলেন, ‘‘ওই হোমে অনেক ধরনের আবাসিক রয়েছেন। এটা একটা সমস্যা ঠিকই। কিন্তু আবাসিকদের খাবারের পরিমাণ ও মানের ব্যাপারে কোনও রকম আপস করা যাবে না। অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’’

লিলুয়া হোমের দায়িত্বপ্রাপ্ত, হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘আমরা খাবারের মান নিয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য মহিলা অফিসারদের একটি দলকে ওই হোমে পাঠানো হবে।’’ লিলুয়া হোমের সুপার অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের।

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy