অনিয়ম: হট মিক্স প্লান্ট বসিয়ে পিচ গলানো চলছে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেনে। নিজস্ব চিত্র।
বায়ুদূষণের হাত থেকে বছরের পর বছর পরিবেশকে রক্ষা করে চলেছে যে উদ্যান, হাওড়ার সেই বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরেই এ বার পরিবেশ দূষণ ঘটানোর অভিযোগ উঠল খোদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রাস্তা তৈরির জন্য প্রকাশ্যে হটমিক্স প্লান্ট বসিয়ে পিচ না গলানোর বিষয়ে পরিবেশ আদালতের যে নির্দেশ রয়েছে, তা অমান্য করে উদ্যান কর্তৃপক্ষ গত এক সপ্তাহ ধরে সেখানকার শতাব্দীপ্রাচীন বটগাছের সামনের রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় মেরামতির কাজ শুরু করেছেন। যার জেরে ঐতিহাসিক ওই উদ্যানের দুষ্প্রাপ্য বহু গাছপালা বায়ুদূষণে জর্জরিত। সেই সমস্ত গাছের স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশকর্মীরা। হটমিক্স প্লান্টের কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। উদ্যান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, আদালতের যে এই ধরনের কোনও রায় আছে, সেটাই নাকি তাঁরা জানতেন না। কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরকে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হবে।
বছর আটেক আগে স্থানীয় এক কাঠের ব্যবসায়ীর বিয়েতে বটানিক্যাল গার্ডেন ভাড়া দেওয়া ও সেখানে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার ঘটনায় বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই উদ্যান কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে রাজ্য পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, উদ্যানের ভিতরে রান্না অথবা এমন কোনও কাজ করা যাবে না, যাতে গাছপালার ক্ষতি হয়। এর পাশাপাশি, প্রকাশ্যে হটমিক্স প্লান্ট বসিয়ে পিচ না গলানোর ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতেও রাজ্য পরিবেশ আদালত রাজ্য পরিবেশ দফতরকে একই নির্দেশ দিয়েছিল। আর সেই নির্দেশের জন্যই হাওড়া সেতুতে হটমিক্স প্লান্ট বসিয়ে পিচ গলানোর কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় হাওড়া সেতুর রাস্তা মেরামতির কাজ আজও শেষ হয়নি।
বটানিক্যাল গার্ডেন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই উদ্যানের পশ্চিম দিকের বহু রাস্তা থেকে পিচ উঠে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরের মাধ্যমে মেরামতির কাজ শুরু করেন। কিন্তু অভিযোগ, রাজ্য পরিবেশ আদালতের নির্দেশের কোনও রকম তোয়াক্কা না করেই প্রাচীন বটগাছটির সামনে হটমিক্স প্লান্ট বসিয়ে কাজ শুরু হয়। যার ফলে এখন প্রতিদিনই কালো ধোঁয়ায় ঢেকেযাচ্ছে উদ্যানের আকাশ। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে উদ্যান কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। উদ্যানের নিত্য প্রাতর্ভ্রমণকারীদের তরফে স্মরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এ ভাবে উদ্যানের পরিবেশ দূষণ বন্ধ না হলে আমরা আদালতে যাব।’’
উদ্যানের ভিতরে হটমিক্স প্লান্ট চলা নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এটাপুরোপুরি আইনবিরুদ্ধ কাজ। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ আছে, প্রকাশ্যে হটমিক্স প্লান্টে এ ভাবে পিচ গলিয়ে রাস্তা করা যাবে না। আমি কথা বলব উদ্যান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। প্রয়োজনে আদালতে যাব।’’
উদ্যানের ভিতরে হটমিক্স প্লান্ট বসিয়ে কাজ করার বিষয়ে পরিবেশকর্মী এবং প্রাতর্ভ্রমণকারীরা উদ্বিগ্ন হলেও বিন্দুমাত্র উদ্বেগ শোনা যায়নি উদ্যানেরযুগ্ম-অধিকর্তা দেবেন্দ্র সিংহের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ সব জানতাম না।কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর কাজটা করছে। ওদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy