দেশের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফের চ্যাম্পিয়ন হল বারাসতের অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়স সবে ১০ বছর পেরিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন মিলেছে ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরের বারেই ‘খেলো ইন্ডিয়া’য় ব্রোঞ্জ। ২০২২ সালে সারা ভারত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। ’২৩-এ ব্রোঞ্জ। ২০২০ এবং ’২১ সালে অতিমারির জন্য প্রতিযোগিতা হয়নি।
এ বার পূর্বাঞ্চলের ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় যোগ দিয়েছিল প্রতিযোগিতায়। দেশে মোট ৮টি অঞ্চল বা জ়োন ছিল। প্রত্যেক অঞ্চল থেকে ৪টি, অর্থাৎ, মোট ৩২টি দল চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। চূড়ান্ত পর্বের খেলা হয় ২৯ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি কানপুরের ছত্রপতি সাহু মহারাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায়। কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাডামাস ১-০ গোলে হারায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেমিফাইনালে তাদের কাছে ৩-২ গোলে পরাজিত হয় মিরাটের আইআইএমটি। ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারায় কেরলের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়কে। গোলদাতা আকাশ দত্ত এবং সৌরভ সব্বর। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা দলগুলিকে নিয়ে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ হয়। এ বারেও অ্যাডামাস ‘খেলো ইন্ডিয়া’য় খেলবে।
অ্যাডামাসের ধারাবাহিক সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন কোচ সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় নামতে ইউজিসি অনুমোদন বাধ্যতামূলক। ওই অনুমোদন পাওয়ার মাস তিনেক আগে অ্যাডামাসের ফুটবল দলের দায়িত্ব নেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সুকান্ত। নিরাশ করেননি।
বছর ঊনচল্লিশের সুকান্তের কোচিংয়ে ‘সি’ লাইসেন্স রয়েছে। আগামী এপ্রিলে ‘বি’ লাইসেন্সের পরীক্ষায় নামবেন। ঘনিষ্ঠদের অনেকে মনে করেন, বাংলার ছোটদের দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব সুকান্তের কাঁধে তুলে দেওয়া যেতেই পারে। শ্রীরামপুর মহকুমা ফুটবলে মাহেশ ছাত্র সঙ্ঘ এবং সৌরভ সঙ্ঘের প্রশিক্ষক তিনি।
সুকান্ত বলেন, ‘‘ইউজিসি অনুমোদন পাওয়ার পরেই মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় নেমেছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। পূর্বাঞ্চলীয় স্তরে দ্বিতীয় ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরেছিলাম। পরের বার থেকেই সাফল্য আসতে শুরু করে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার উপরে ভরসা রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সমিত রায় এবং স্পোর্টস ডিরেক্টর রঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দলের ছেলেদের মধ্যে লড়াকু মানসিকতা তৈরি করতে পেরেছি, এ জন্য আমি খুশি। ওঁদের হার না মানা মনোভাবেই সাফল্য। এই সাফল্যের কারণে স্পোর্টস কোটায় অনেকেই চাকরি পেয়েছেন, এটা বাড়তি আনন্দ।’’
শ্রীরামপুর মহকুমা লিগে রিষড়া স্পোর্টিংয়ের হয়ে চার বছর খেলেছেন সুকান্ত। ১৪ বছর বৈদ্যবাটীর বিএস পার্কে। মাঠ তাঁকে চেনে ‘সুকান’ নামে। কলকাতা ময়দানে টালিগঞ্জ অগ্রগামী, উয়াড়ি, জর্জ টেলিগ্রাফ, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ, পোর্ট ট্রাস্ট, পিয়ারলেস, কাস্টমসের মতো দলের হয়ে খেলেছেন। আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলেছেন দিল্লি ইউনাইটেড, চেন্নাই অ্যারোজ়ের হয়ে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দলেও খেলেছেন সর্বভারতীয় স্তরে। তবে, চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সেই আক্ষেপ কড়ায়-গন্ডায় মিটেছে কোচ হিসাবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)