বোনকে খুন করার অভিযোগে পুলিশ ধরতে এসেছিল দাদাকে। কিন্তু ভাই এসে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নেন। বাকি ছিল যাত্রাপালার অন্তিম দৃশ্য। ঠিক তখনই দাদার ভূমিকায় অভিনয় করা শিল্পী মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন মঞ্চে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন পালাগানের জীবন। যে পালাগানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেখানে নিজের ‘পার্ট’ অসমাপ্ত রেখে চলে গেলেন যাত্রাশিল্পী মিলন গায়েন। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বালি ঠাকুরান চক এলাকায়।
প্রতি বছরের মতো এ বারও দোলের পর যাত্রাপালার আসর বসেছিল বালি ঠাকুরানিচক হরিসভাতলায়। রবিবার রাতের পালাগানের নাম ছিল, ‘মৃত্যু বাসরে ফুলশয্যা।’ দর্শক হয়েছিল ভালই। পালাগান জুড়ে টানটান উত্তেজনা। কিন্তু অন্তিম দৃশ্যে এসে ছন্দপতন। মাঠভর্তি দর্শকের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন মিলন নামে ৫৫ বছরের যাত্রাশিল্পী।
মিলনই ছিলেন যাত্রাপালার পরিচালক এবং অভিনেতা। চিত্রনাট্যে ছিল দুই ভাই, জীবন এবং চন্দন গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের একমাত্র বোন সীতার বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পণ আদায়ের জন্য বোনের উপর অত্যাচার করছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ছোট ভাই চন্দন ছদ্মবেশে বোনের অত্যাচারের বদলা নিতে খুন করেন এক জনকে। অন্য দিকে, বড় দাদা জীবন পণের টাকা জোগাড় করতে না পেরে বোনকেই খুন করে ফেলেন। সেই সময় পুলিশ তাঁকে ধরতে আসে। তখন ছোট ভাই এসে বলেন, সব খুনের দায় তাঁর। দাদা নির্দোষ। দাদাকে ছেড়ে পুলিশ যেন তাঁকে গ্রেফতার করে। জীবনের ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন মিলন। মঞ্চের জীবন পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেলেন। কিন্তু বাস্তবের মিলনের বিয়োগান্তক পরিণতি হল পালাগানের মধ্যে। যা দেখে চোখে জল এল সমস্ত দর্শকের।
মিলনের সহশিল্পীরা জানাচ্ছেন, কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তার পরেও কাজ করে গিয়েছেন। অভিনয়ের নেশায় মঞ্চে অভিনয় করেছেন। এক যাত্রাশিল্পীর কথায়, ‘‘যাত্রা ছিল ওঁর ধ্যানজ্ঞান। দর্শকের মাঝেই মৃত্যু হল মিলনদার।’’ তিনি জানান, জীবনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মিলন। তাঁর শেষ সংলাপ ছিল, ‘‘দোষী হয়েও আমি নির্দোষ হয়ে গেলাম।’’ কিন্তু সেটা আর বলা হল না!