স্নেহ: নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে খুশি। নিজস্ব চিত্র
মুখে তার হাসি ধরে না! তাই মাস ছয়েকের এই খুদের নাম রাখা হয়েছে ‘খুশি’। তার মা ছেড়ে গিয়েছে গত অগস্টে। সেই থেকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালই বাড়ি খুশির। হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা তাকে দেখভাল করে, ভালবাসে। আজ, সোমবার তার মুখেভাতের আয়োজন করা হয়েছে হাসপাতালের তরফেই। তাই সাজ সাজ রব সেখানে।
নিয়ম অনুযায়ী, যে শিশুদের পরিচয় জানা যায় না, তাদের ঠাঁই হয় সরকারি হোমে। বয়স, ওজন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে তাদের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ী, এ বার হোমের বাসিন্দা হতে হবে খুশিকেও। তাই মুখেভাতের মাধ্যমেই খুশিকে বিদায় জানাতে চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে খুশি ছাড়া আরও দুই খুদে হরিপদ আর হাসিও বড় হচ্ছে এই হাসপাতালেই। বয়স হলে তাদের জন্যও মুখেভাতের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
হাসপাতালের কর্মীরা জানান, চলতি বছরের গত ১৭ মার্চ সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মহিলা জন্ম দেয় কন্যা সন্তানের। তারপর অসুস্থ ছিল ওই মহিলা। সন্তান-সহ তাকে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় গত ২২ জুলাই। চিকিৎসার সুবিধার্থে শিশুটিকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। অগস্টের শেষে সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যায় সেই ভবঘুরে মহিলা। তারপর থেকে সেই শিশু রয়েছে নবজাতক পরিষেবা কেন্দ্রে। তাকেই আদর করে নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ডাকেন ‘খুশি’ বলে।
মুখেভাতের অনুষ্ঠানে খুশির জন্য নতুন জামা কিনে দিয়েছেন অনেকে। এসেছে প্রথম বার ভাত খাওয়ানোর বাসন, লাল শাড়ি। সোমবার ভোরে স্থানীয় একটি মন্দিরে খুশির জন্য পুজো দেওয়া হবে। সেই প্রসাদ প্রথমে মুখে দেওয়া হবে তার। এছাড়া নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি থেকে নানা ব্যঞ্জন তৈরি করে নিয়ে আসবেন। তা দিয়েই হবে খুশিরমুখেভাতের অনুষ্ঠান।
কিন্তু এত আয়োজন শেষে খুশিকে বিদায় জানাতে হবে ভেবেই মাঝেমাঝে চোখে জল নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এক নার্সের কথায়, ‘‘হাতে করে বড় করতে করতে মায়া পড়ে যায় তো! তবু নিয়মে বাঁধা আমরা। খারাপ লাগছে।’’ হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে প্রতি বছরই এমন খুদেদের দায়িত্বে রাখতে হয় হাসপাতালের কর্মীদের। তাদের যত্নে, মমতায় দেখভাল করেন কর্মীরা। তাদের ছাড়তে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। খুশির জীবন খুশিতে ভরুক, এটাই একান্ত প্রার্থনা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy