যদি কিছু মেলে, তারই সন্ধানে। — নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল নেতার বাধায় পাট্টা পাওয়া জমিতে এক বৃদ্ধ ঘর করতে পারেননি বলে অভিযোগ। স্ত্রীকে নিয়ে থাকছিলেন রাস্তার ধারে প্লাস্টিক ও টালির ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ থেকে গ্যাস বেরিয়ে আগুন লেগে ভস্মীভূত হল সেই বাড়ি। বনমালী ও সনকা দলুই নামে হাওড়ার শ্যামপুর ২ ব্লকের খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতের মরশাল গ্রামের ওই দম্পতি এখন কার্যত গৃহহীন।
বনমালী জানান, বছর দশেক আগে রাজ্য সরকারের তরফে তিন শতক জমির পাট্টা পেলেও জমি হাতে পাননি। প্রশাসনকে বহু বার জানিয়েও কিছু হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নে। পাট্টা দেওয়া জমি দখলমুক্ত করে প্রশাসন কেন বনমালীর হাতে তুলে দেয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে। বেদখল হওয়া সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে সম্প্রতি প্রশাসনকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিডিও সঞ্জু গুহ মজুমদার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। বিএলআরও-র সঙ্গে কথা বলব। কোনও সমস্যা থাকলে শীঘ্রই মিটিয়ে পাট্টা পাওয়া জমিতে যাতে ওই পরিবার বসবাস করতে পারে, সেই চেষ্টা করা হবে।’’ জমিটি যে তাঁর দখলে, মেনে নিয়েছেন দীপক সাউ নামে ওই তৃণমূল নেতা তথা শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য।
বছর সাতষট্টির বনমালী এবং তাঁর তিন ছেলে ভ্যানচালক। সনকা গৃহসহায়িকা। নিজেদের জমি নেই। শ্যামপুর-উলুবেড়িয়া রাস্তার ধারে বনমালী-সনকার ঘরের পাশেই তিনটি কাঁচাবাড়িতে তিন ছেলের সংসার। বনমালী জানান, সোমবার দুপুরে সিলিন্ডারের পাইপ ফুটো হয়ে গ্যাস বেরোচ্ছিল। বুঝতে না পেরে সনকা গ্যাস জ্বালাতে যেতেই আগুন ধরে যায়। পোশাক থেকে টাকা সব পুড়ে ছাই। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টিবাদলের দিন। সোমবার রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। আজও হয় তো তাই থাকতে হবে। কিন্তু এ ভাবে কত দিন!’’
দীপক সাফ জানান, ওই জমি তাঁর দখলে। পিছনে তাঁর নিজের জমি। তাই বনমালীকে পাট্টা জমির দখল নিতে দেননি। দীপকের দাবি, পঞ্চায়েতের তৎকালীন তৃণমূল সদস্য অরূপ মাঝি কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই জায়গা পাট্টা দিয়েছেন। অরূপের বক্তব্য, ‘‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে সরকার খাস জমি চিহ্নিত করে গরিবদের পাট্টা বিলি করেছিল। সরকারি আধিকারিকেরা নথিপত্র দেখে, সরেজমিনে পরিদর্শন করে তবেই পাট্টা দিয়েছেন। এতে পঞ্চায়েত সদস্যের ভূমিকা ছিল না। বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও বনমালীবাবু জমি হাতে না পাওয়া আমাদের ব্যর্থতা।’’
পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামল সামন্ত বলেন, ‘‘ওই পরিবারকে ত্রিপল ও খাবার দেওয়া হয়েছে। জমি নিয়ে দীপক সাউয়ের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি, সেখানেই ঘর করে দেওয়া হবে বনমালীবাবুকে।’’ দীপক বলেন, ‘‘ওই জমির বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করব।’’
কোনও টাকা অবশিষ্ট আছে কিনা, মঙ্গলবার সকালে ছাই ঘেঁটে দেখছিলেন সনকা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘পরের বাড়ি কাজ করে তিল তিল করে কুড়ি হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, বর্ষায় ঘরটা মেরামত করব। চোখের সামনে টাকাগুলো পুড়ে গেল।’’ বনমালীর খেদ, ‘‘বার্ধক্য ভাতা পর্যন্ত পাই না। শুধু স্ত্রী লক্ষ্মী ভান্ডারের টাকা পান। কী করে চলবে, জানি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy