স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলি করছেন সুমন্ত। সঙ্গে চলছে মেনস্ট্রুয়াল কাপ নিয়ে বোঝানো। —ফাইল চিত্র।
মহিলাদের স্বাস্থ্যরক্ষা এবং কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলার লক্ষ্যে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রচার করেন চন্দননগরের সুভাষপল্লির সুমন্ত বিশ্বাস। এ বার জুড়েছে পরিবেশের ভাবনা। তাই ঋতুস্রাবের সময়ে ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে মহিলাদের বোঝানো শুরু করেছেন তিনি।
নিজের শিশুকন্যার জন্মদিন সুমন্ত পালন করেন ‘নারীর ঋতুকালীন সংস্কার দূরীকরণ দিবস’ হিসাবে। সম্প্রতি, মেয়ের পাঁচ বছরের জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপের’ উপকারিতা বোঝাতে পথে নেমেছেন এই ‘প্যাডম্যান।’
সুমন্ত ভূগোলের গৃহশিক্ষক। এই কাজে তাঁর সঙ্গে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁর এবং ছাত্রছাত্রীদের টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে প্রতি মাসে সিঙ্গুরে রেলবস্তির মহিলাদের বিলি করেন সুমন্ত। দিন কয়েক আগেই ওই কর্মসূচি ছিল। সঙ্গে ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ নিয়ে গিয়ে ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপকারিতা বুঝিয়েছেন।
সুমন্ত এবং একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ সিলিকন বা রবার দিয়ে তৈরি ছোট্ট নমনীয় ফানেল আকৃতির কাপ। ঋতুস্রাবের সময়ে এটি শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। তাতেই স্রাব জমা হয়। ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত শরীরে রাখা যায়, ন্যাপকিনের মতো বার বার বদলের প্রয়োজন নেই জিনিসটি। এর ব্যবহার তুলনায় স্বাচ্ছন্দ্যের। র্যাশের ভয় নেই। জিনিসটি পরে থাকা অবস্থায় সাঁতারও কাটা যায়! পুনর্ব্যবহার করা যায় অনেক বছর। ফলে সাশ্রয় হয়।
এই কাপ পরিবেশবান্ধব। এক জন মহিলা সারাজীবনে বেশ কয়েক হাজার স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। ফলে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যা মাটিতে মিশতে বহু বছর লাগে। দূষণ হয়। মেনস্ট্রুয়াল কাপে এই সমস্যা নেই। প্রতি মাসে ন্যাপকিন কেনার খরচেরও বালাই নেই বলে জানালেন সুমন্ত।
তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি এবং আমার ছাত্রী কঙ্কনা, সুচিত্রা, পাপিয়া, বিদিশারা বস্তির মহিলাদের বুঝিয়েছি। উন্নত বিশ্বে মহিলারা এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। কেরলের একটি গ্রামে মহিলারা প্যাড-ফ্রি এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এখানেও ধীরে ধীরে চালু করা দরকার মহিলাদের এবং পরিবেশের কথা ভেবে।’’ চিকিৎসক ঈশিতা দাসের বক্তব্য, শুধু ঠিকঠাক ব্যবহার ও পরিচ্ছন্ন করে রেখে দেওয়ার পদ্ধতি জেনে নেওয়া এবং কাপটি সঠিক উপাদান দিয়ে তৈরি কিনা, তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসক প্রভাস দাসেরও বক্তব্য, ‘‘ব্যবহার শিখে গেলে কোনও সমস্যা নেই।’’ দুই চিকিৎসকেরই মতে, সুমন্তের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
সুমন্ত জানান, স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপযোগিতা এবং ঋতুস্রাব নিয়ে কুসংস্কার দূর করতে ২০১২-’১৩ সাল থেকে তিনি ছাত্রছাত্রী, পড়শিদের বোঝাতে শুরু করেন। রানিগঞ্জ স্টেশনে এক ছাত্রীর ঋতুস্রাব শুরু হওয়ায় তাঁকে বিড়ম্বনায় পড়তে দেখে এ নিয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নেন। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়েও প্রচার শুরু করেন। হুগলি, হাওড়া, সুন্দরবন, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম, নদিয়া, বাকুঁড়া, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমানের নানা প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে মহিলাদের নিয়ে এ ব্যাপারে শিবির করেছেন সুমন্ত। বিলিয়েছেন ন্যাপকিন। শিবির করেছেন ঝাড়খণ্ডের দুমকাতেও। দেশ জুড়ে রেশনে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
এ বার প্রচার শুরু ‘মেনস্ট্রুয়াল কাপ’ নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy