আহত কিশোরের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র
হুগলি জেলার পান্ডুয়ায় বোমা ফেটে মৃত্যু হল এক কিশোরের। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই কিশোর। আহত এক কিশোরের বাঁ হাত উড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। এখন সে হুগলির ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পান্ডুয়ার তিন্না নেতাজিপল্লি কলোনিতে পুকুরের ধারে খেলা করছিল বেশ কয়েক জন কিশোর। হঠাৎই বিকট শব্দ পান স্থানীয়েরা। তাঁরা দেখেন, বোমার আঘাতে ছিটকে নানা দিকে পড়ে রয়েছে ওই শিশুরা।
জখম তিন কিশোরকেই উদ্ধার করে প্রথমে পান্ডুয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এক জনকে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কে বা কারা ওই এলাকায় বোমা রাখল, তা তদন্ত করে দেখছে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বম্ব স্কোয়াডকে খবর দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু বিস্ফোরক থাকলে তার খোঁজ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে নিহত কিশোরের নাম রাজ বিশ্বাস ( ১১)। তার বাড়ি বর্ধমানের পাল্লা রোডে। পান্ডুয়ায় মামার বাড়িতে এসেছিল সে। আহত কিশোরদের মধ্যে এক জনের নাম রূপম বল্লভ। অন্য জনের নাম সৌরভ চৌধুরী। আহত এক কিশোরের ঠাকুমা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “ছেলেটা বাড়িতে টিভি দেখছিল। পাশের বাড়ির ছেলেটা খেলতে ডাকায় আমায় বলে বাইরে বেরোল। রান্নাঘরে ঢুকেই শুনি বিকট শব্দ। দৌড়ে গিয়ে দেখি এই অবস্থা।” স্থানীয়দের অধিকাংশেরই বক্তব্য, শান্ত এলাকায় আগে কখনও এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
সোমবারই পান্ডুয়ায় হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সভা করবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ভোটের আবহে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। বাম এবং বিজেপি তৃণমূলকে তোপ দেগেছে।
বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন হুগলি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি এলাকায় যাচ্ছি। অভিষেক আসছেন। তার আগে ওঁকে তৃণমূলের কর্মীরা দেখাচ্ছেন, কে কত বড় আসামি। গণতন্ত্রের উৎসবে গণতন্ত্রের মৃত্যু চলছে। যে ভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বোমা উদ্ধার হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষের উপর তৃণমূলের বিশ্বাস নেই। তারা বন্দুকের উপর, বোমার উপর বিশ্বাস করে।” একই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, “কাউকে ছাড়া হবে না। তদন্ত হবে। ওরা অভিষেককে স্বাগত জানাচ্ছে শিশুকে হত্যা করে! এত বড় সাহস!” ধনেখালির বিধায়ক তথা পান্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে দলের তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত অসীমা পাত্রকে আক্রমণ করে লকেট বলেন, “উনি এই ঘটনার মূল কারিগর। হাতে বোমা নিয়ে তিনি প্রার্থীকে জেতানোর কথা বলছেন। মানুষ জবাব দেবে।” সোমবার দুপুরের দিকে কিছু সময়ের জন্য জিটি রোড অবরোধ করেন বিজেপির কর্মীসমর্থকেরা।
সিপিএম নেতা তথা দমদম কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, “ভয়ঙ্কর, মর্মান্তিক ঘটনা। পুকুরপাড়ে খেলতে গিয়ে বোমায় শিশুর মৃত্যু। প্রশাসন নিশ্চুপ। কারা এই বোমা মজুত করছে? পুলিশ কী করছে? দুষ্কৃতীরা যদি মনে করে আমাদের মাথায় পুলিশমন্ত্রীর হাত রয়েছে, তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।” তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “যে দল মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে আরও বেশি ভোটে জেতার জায়গায় রয়েছে, তাদের এই সব বোমাগুলির প্রয়োজন পড়ে না। বিরোধীদের এ সবের প্রয়োজন হলেও হতে পারে। আগামী ৪ জুনই প্রমাণ হয়ে যাবে মানুষ কাদের সঙ্গে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy