বাবা-মা ভাইয়ের সঙ্গে পদক হাতে কণিকা মন্ডল। পেছনে দেখা যাচ্ছে প্লাস্টিকের শৌচাগার। নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারে হুগলির বলাগড় ব্লকের পাঁচ প্রতিযোগী মিলে ৮টি পদক জিতলেন।
গত ৩-৫ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ের অ্যাকোয়াটিক কমপ্লেক্সে বৌদ্ধিক অক্ষমতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের নিয়ে জাতীয় প্যারা সুইমিং প্রতিযোগিতা হয়। আয়োজক ছিল প্যারা অলিম্পিক অনুমোদিত বৌদ্ধিক অক্ষমতাযুক্তদের জন্য তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সিভাস ইন্ডিয়া’। বিভিন্ন রাজ্যের শ’দেড়েক প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিলেন। বলাগড়ের পদকজয়ী পাঁচ জনেরই সংসার টেনেটুনে চলে।
জোড়া সোনা জিতেছে বলাগড়ের ক্ষত্রিয়নগর গ্রামের রুদ্র বিশ্বাস। স্থানীয় পরিতোষ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রটি সেরা হয়েছে ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল ও ব্যাক স্ট্রোকে। জিরাটের কালিয়াগড় হরিতলার কণিকা মণ্ডল ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ব্যাক স্ট্রোকে তাঁর ঝুলিতে রুপো। অষ্টাদশী কণিকা বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। পরিতোষ মেমোরিয়ালের নবম শ্রেণির ছাত্রী অনসূয়া বিশ্বাস ফ্রি স্টাইলে রুপো এবং ব্যাক স্ট্রোকে ব্রোঞ্জ পদক জেতে। সে থাকে ক্ষত্রিয়নগরে। জিরাটের টিনচরের বছরের ছাব্বিশের অর্পণ বারিক ব্যাক স্ট্রোকে রুপো জেতেন। কালিয়াগড় রথতলার বছর একত্রিশের অরিন্দম মণ্ডল ব্যাক স্ট্রোকে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
পদকজয়ীদের বাড়ির লোকেরা জানান, প্রত্যেকেই ছোট থেকেই জিরাটের আস্থা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার অচিন্ত্য দত্তের কাছে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা খেলায় প্রশিক্ষণ নেন। অচিন্ত্য বলেন, ‘‘সাধারণ ছেলেমেয়েদের থেকে ওরা কোনও অংশে কম নয়। দুঃস্থ পরিবারের এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্নর ছেলেমেয়েরা জাতীয় স্তরে সাঁতারে জায়গা করে নিতে পেরেছে। ওদের আত্মবিশ্বাস আগামীতে আরও বেড়ে যাবে।’’ জড়িয়ে যাওয়া কথায় আগামী দিনে আরও দূরে পৌঁছনোর আত্মবিশ্বাস শোনা গেল ওই পাঁচ জনের গলাতেও।
কণিকার বাবা কৃষ্ণ টোটো সারাইয়ের মিস্ত্রি। মা স্বপ্না বিড়ি বাঁধেন। ভাইও আছে। মিলনগড়ে টিন-ঘেরা ঘরে থাকত কণিকারা। মাস দুয়েক ধরে কালিয়াগড়ে ঘর করেছে টিন দিয়েই। শৌচাগার নেই। শৌচালয় বলতে প্লাস্টিক ঘেরা জায়গাই ভরসা। আঁকা এবং ব্যাডমিন্টনেও দখল আছে কণিকার। তবে তিনি চান সাঁতারু হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে। রুদ্রের বাবা রাজীব রাজমিস্ত্রি। মা শিউলি গৃহবধূ। তাঁদের দিন গুজরান টিন-ত্রিপলে ঘেরা ঘরে। ভলিবল, ফুটবলেও রুদ্র ভাল। বেশি ভালবাসেন ফুটবল।
অনসূয়ার বাবা জয়দেব ট্রেনে হকারি করতেন। মাস ছয়েক ধরে স্নায়ুর সমস্যায় কাজ বন্ধ। সংসার চালাতে অনসূয়ার দাদা মোটরবাইকের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানে কাজ করেন। অনসূয়ার স্বপ্ন বড় সাঁতারু হওয়ার। অর্পণের ছেলেবেলাতেই বাবা মারা যান। মা রিনা টিনচর প্রাথমিক স্কুলের মিড ডে মিল কর্মী। চারটি বাড়িতে রান্নার কাজও করেন। দৌড়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চান অর্পণ। অরিন্দমের বাবা শ্যাম খেতমজুর। মা দীপালি একটি বেসরকারি অফিসে রান্নার কাজ করেন। অনটনে ষষ্ঠ শ্রেণিতেই পড়া ছেড়েছিলেন অরিন্দম। এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান সাঁতার এবং দৌড়।
সকলের পরিবারের লোকেরাই জানালেন, ১২-১৫ হাজার টাকা দিয়ে সাঁতারের পোশাক কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। কণিকা-রুদ্রেরা তাই সস্তার পোশাক আর চশমা-টুপি পরেই জলে নামেন। অনেক সময়ে অচিন্ত্য আর্থিক ভাবেও শিক্ষার্থীদের সাহায্য করেন। অভিভাবকদের আর্জি, খেলার পরিকাঠামোর উন্নতিতে এগিয়ে আসুক প্রশাসন। তা হলে অচিন্ত্যের প্রশিক্ষণে ছেলেমেয়েরা আরও উন্নতি করবে বলে তাঁদের বিশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy