দুর্ঘটনার পর মুম্বই রোডে অবরোধ। ছবি: সুব্রত জানা
মোটরবাইকে স্ত্রী, চার বছরের ছেলে এবং সাত বছরের ভাইঝিকে নিয়ে আত্মীয়ের পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন রাজাপুরের এক যুবক। উলুবেড়িয়ার নিমদিঘি মোড়ে মুম্বই রোডে ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল তিন জনের। গুরুতর জখম হয়েছেন ওই যুবক। তাঁকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনায় মৃতেরা হলেন পাপিয়া মণ্ডল (২৪), ছেলে পৃথ্বীশ এবং পাপিয়ার ভাসুরের মেয়ে বিদিশা। দুর্ঘটনার পরেই এলাকাবাসী যত্রতত্র অটো দাঁড়ানোর প্রতিবাদে অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, একটি অটোকে পাশ কাটাতে গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দীপ মণ্ডল নামে ওই মোটরবাইক আরোহী। ঘণ্টাখানেক অবরোধের জেরে মুম্বই রোডে যানজট হয়। পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুম্বই রোডে অটো দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার রুখতে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। বহু অটোচালককে জরিমানাও করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখের আড়ালে মুম্বই রোডে বেআইনি ভাবে অটো দাঁড়িয়ে থাকছে। এ বার আরও বেশি নজরদারি চালানো হবে। জরিমানাও করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপদের বাড়ি রাজাপুরের জোয়ারগড়িতে। আত্মীয়ের পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে তাঁরা বাউড়িয়ার ঘোষালচকের কেঠোপোলে যাচ্ছিলেন। মোটরবাইকটি দীপের এক আত্মীয়ের। দীপের মাথায় হেলমেট থাকলেও বাকি তিন জনের ছিল না। পিছনেই একটি স্কুটিতে দীপের দিদি কনকলতা সাঁতরা এবং জামাইবাবু সুশান্ত সাঁতরাও ওই অনুষ্ঠান-বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
মুম্বই রোডের কলকাতামুখী লেনে দীপের বাইকের ডান দিকের হ্যান্ডেল ডাম্পারে ঠেকে যায়। দীপ বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান। চার জনই ছিটকে পড়েন। দীপ পড়েন বাঁ দিকে, বাকি তিন জন ডান দিকে। ডাম্পারের বাঁ দিকের পিছনের চাকা পাপিয়া, পৃথ্বীশ ও বিদিশার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। দীপকে প্রথমে মুম্বই রোড লাগোয়া উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। পুলিশ মৃতদেহ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য ওই হাসপাতালে পাঠায়। তবে, ডাম্পারটিকে ধরতে পারেনি।
এ দিন দীপের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘দীপকে বারবার বলেছিলাম, টোটো ভাড়া করে চলে যেতে। কিন্তু কথা না শুনে মোটরবাইক নিয়ে গেল। অকালে ঝরে গেল তিনটি প্রাণ।’’
মুম্বই রোডের নিমদিঘি মোড়ে সারি দিয়ে প্রতিদিনই অটো দাঁড়িয়ে থাকে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, অটো দাঁড়িয়ে থাকার ফলে গ্রামের ভেতর থেকে আসা গাড়িকে মুম্বই রোডে উঠতে বেগ পেতে হয়। ওই জাতীয় সড়কের অর্ধেকটাই চলে যায় অটোর দখলে। ফলে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। নিমদিঘির মোড়ের কাছেই ইএসআই হাসপাতাল। রোগী নিয়ে কোনও গাড়ি মুম্বই রোডে উঠতেও সমস্যায় পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজাউদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘‘নিমদিঘি মোড়ে উড়ালপুল করার জন্য বহুবার বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছে। অন্যান্য জায়গায় উড়ালপুল হলেও নিমদিঘির মতো জনবহুল এলাকায় উড়ালপুল কেন হচ্ছে না, বোঝা যাচ্ছে না।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘নিমদিঘিতে উড়ালপুল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় উড়ালপুলের কাজ চলছে। শীঘ্রই এখানেও উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy