বিশৃঙ্খলার পর ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চটি। নিজস্ব চিত্র।
ফটক খুলতেই ভিতরে ঢোকার জন্য শুরু হল মহিলাদের ধাক্কাধাক্কি। অনেকেই পড়ে গেলেন। জখম হলেন অন্তত ১০ জন। আরও মহিলা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে যাতে বিপদ না বাড়ে, সে জন্য লাঠি উঁচিয়ে তাঁদের ফটকের বাইরেই থামানোর চেষ্টা করল পুলিশ। তাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলেন অনেকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা গেল, কয়েকশো চটি ইতিউতি ছড়িয়ে।
শনিবার সকালের এই ছবি খানাকুলের রামমোহন কলেজে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের। করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় এড়াতে সার্বিক ভাবে হুগলিতে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তাতেও অনেক জায়গায় ভিড় আটকানো যাচ্ছে না। শুক্রবার তার জেরে তৈরি হওয়া চরম বিশৃঙ্খলার সাক্ষী রইল খানাকুলের ওই শিবির।
কর্মসূচির গোড়া থেকেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন শিবিরে ভোর থেকে লাইন পড়ছে। এ দিন খানাকুল-১ ব্লকের রামমোহন-১ পঞ্চায়েতে চারটি শিবির হয়। সর্বত্রই প্রচুর মহিলা ভিড় করেছিলেন। সকাল ১০টা থেকে শিবির শুরু হওয়ার সময়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রামমোহন কলেজের সামনে ভোর চারটে থেকেই মহিলাদের লাইন পড়ে। সময় যত গড়িয়েছে, ভিড় বেড়েছে। সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ ফটক খুলতেই বিপত্তি। আহত তিন মহিলাকে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। বাকিদের স্থানীয় ভাবে শুশ্রূষা করা হয়।
পরিস্থিতির জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই প্রশাসনের উদাসীনতাকে দুষছেন। মিনতি মালিক, শিবানী দোলুই প্রমুখের বক্তব্য, ‘‘আরও সকালে ফটক খুলে সুষ্ঠু ভাবে সবাইকে ঢোকানোর ব্যবস্থা করলে গোলমাল হতো না।’’
অভিযোগ উড়িয়ে ব্লক প্রশাসন সূত্রের দাবি, সবাই পুলিশের নির্দেশ মেনে সুশৃঙ্খল ভাবে ঢুকলে গোলমাল হতো না। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে জায়গাটি পিছল ছিল। অনেকে একসঙ্গে ঢুকতে গিয়েই সমস্যা। দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নইমুল হকের বক্তব্য, ‘‘সকালেই একসঙ্গে হাজির হওয়ার হুজুগে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এক মাস ধরে সবাই পরিষেবা পাবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, প্রশাসনের প্রচার সত্ত্বেও আগেভাগে পরিষেবা পেতে ভিড় আটকানো যাচ্ছে না।’’ এ দিন এই শিবিরে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে প্রায় ১১০০ আবেদনপত্র দেওয়া-নেওয়া হয়েছে।
বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমান। তিনি বলেন, ‘‘ভিড় এড়াতে একটি শিবিরে সর্বাধিক দেড় হাজার জনকে পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে জন্যই শিবির বাড়ানো হয়েছে। তবু মানুষ ভিড় করছেন।’’
হুগলি-চুঁচুড়া, ভদ্রেশ্বর শহরে শিবিরে ভিড় কিছুটা কম ছিল। চাঁপদানি, শ্রীরামপুরে ভিড় ছিল। সর্বত্রই ভিড় হচ্ছে মূলত ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে নথিভুক্তির আবেদন জমা করতে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো জানান, এ দিন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে জেলায় প্রায় ৪১ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে। শনিবার পর্যন্ত জেলায় এই প্রকল্পে প্রায় আড়াই লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়ছে। কর্মসূচির শুরুতে ৯০৭টি শিবির হবে বলে ঠিক ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ১৪২৭টি করা হয়। ওই সংখ্যা আরও ৮৫১টি বাড়িয়ে ২২৭৮টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে একাধিক শিবির করা হচ্ছে। লোকজনকে সচেতন করতে প্রচার চলছে।’’
ভিড়ে রাশ অবশ্য টানা যাচ্ছে না অনেক জায়গাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy