শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে শিশুদের করোনা চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় দফার শেষে এবং তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলা। আপাত ভাবে সেই কাজে প্রশাসন অনেকটাই সফল বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না বলে দাবি প্রশাসনেরও। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, ২০২০-২০২১ অর্থ বর্ষে রাজ্যের স্বাস্থ্য বাজেট যেখানে ছিল ৪ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা, এ বার সেটা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কোভিডে সঙ্কটজনক রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন স্তরের ৭৯টি হাসপাতালে হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (যেখানে সিসিইউ এবং এইচডিইউ থাকবে) পরিষেবা চালু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ ছাড়াও অক্সিজেন প্লান্ট বসানো-সহ নানা পরিকাঠামোও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। বেশি জোর দেওয়া হয়েছে শিশুদের চিকিৎসায়। শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজ্যের তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে শিশুদের করোনা চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
কিন্তু ‘সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের প্রশ্ন, “তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যখন এত ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তখন পুজোয় ভিড় বন্ধ করা গেল না কেন? এতে তো কোভিড ছড়ানোর ঝুঁকি আরও বেড়ে গেল। রোগ হওয়ার পরে চিকিৎসার ব্যবস্থার চেয়ে রোগটা ঠেকানোর জন্য কী করা উচিত, সেটাও তো স্বাস্থ্য দফতরেরই দেখার কথা।”
স্বাস্থ্য শিবিরের বক্তব্য, কোভিড মোকাবিলায় প্রতিষেধক প্রদানে গতি আনা তো বটেই, পাশাপাশি প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজে লাগিয়ে ভায়ালগুলি যথাযথ ভাবে ব্যবহার করে কয়েক লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক বাঁচিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু প্রতিষেধক যেখানে এত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে কসবায় ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ড ঘটল কী করে? কোথাও কি নজরদারিতে খামতি ছিল? কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দামী ইঞ্জেকশন লোপাটের ঘটনার তদন্ত নিয়ে আজও ক্ষুব্ধ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কৌশিক চাকির কথায়, “ওই ঘটনায় এক জন চিকিৎসক ও নার্সকে বদলি করেই দায় সারা হল। কিন্তু সরকার যদি প্রকৃত দোষীকে খুঁজতে তৎপরতা দেখাত, তা হলে মানুষের আস্থা বাড়ত।”
কোভিডের পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও সরকারি তরফে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন, আরামবাগ, বারাসত, ঝাড়গ্রাম, তমলুক, উলুবেড়িয়া, জলপাইগুড়িতে নতুন ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। শ্রীরামপুর, আরামবাগ, রঘুনাথপুরে তৈরি হচ্ছে নতুন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। যদিও প্রশ্ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক-চিকিৎসক, নার্স কিংবা কর্মী মিলবে কোথা থেকে? স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, “নতুন মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং স্কুল তৈরিতে জোর দিচ্ছে সরকার। বেসরকারি সংস্থাকেও তাই মেডিক্যাল কলেজ তৈরির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এতে রাজ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে। নার্সিং-এ আসন বাড়িয়ে নার্সের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে।” কিন্তু যত দিন নতুন চিকিৎসক ও নার্স পাশ করে বেরোবেন না, তত দিন চলবে কী ভাবে? কী ভাবে তৈরি হবেন পরবর্তী প্রজন্মের চিকিৎসকেরা? প্রশাসনের কাছে এখনও এর স্পষ্ট উত্তর নেই।
দিশা নেই রেফার-রোগ কোন ওষুধে সারবে তা নিয়েও। গ্রামগঞ্জে নতুন হাসপাতাল তৈরি হলেও, রেফার-রোগ কোনও ভাবেই কমছে না। রোগীদের প্রশ্ন, “একটি হাসপাতালে শয্যা না-ই থাকতে পারে। কিন্তু একের পর এক হাসপাতালে কেন ঘুরে বেড়াতে হবে? কেন রেফার করার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে না?” ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “সরকারের দাবি, চিকিৎসকেরা গ্রামে যেতে চাইছেন না। তাই গ্রামে চিকিৎসকের অভাব। তাই রোগীদের শহরে ছুটতে হচ্ছে। কিন্তু এটা অভাব নয়, চিকিৎসকদের অনীহা। কারণ, নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি সবেতেই স্বজনপোষণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। সেটা না থাকলে চিকিৎসকও মিলত, পরিষেবাও অনেক উন্নত হত।” শুধু রেফার নয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সমস্ত হাসপাতালে সব রকমের চিকিৎসা না মেলারও অসংখ্য অভিযোগ উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় নজরদারি চালাতে দু’সপ্তাহ অন্তর রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই স্বাস্থ্যসচিব এমনকি প্রয়োজনে মুখ্যসচিবকেও নিয়ে এসে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের কাজে তদারকি করবেন তিনি। কিন্তু স্বাস্থ্যশিবিরের একাংশেরই প্রশ্ন, তাতে কি বঙ্গের আনাচে কানাচে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে ফাঁক রয়েছে তা পূরণ হবে? রাজ্যের স্বাস্থ্যকে চাঙ্গা করতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী সময় দিলেও, সব জায়গার ‘অপুষ্টি’ কি দূর হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy