মোদীর মন্ত্রিসভায় শান্তনু ঠাকুর। —ফাইল চিত্র
নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় শান্তনু ঠাকুর। এই প্রথম মতুয়া সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবে এই উত্থানের পিছনে শান্তনুর কৃতিত্বও কম নয়। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে বিদ্রোহী হয়ে ওঠা সাংসদ শান্তনু তাঁর লোকসভা এলাকায় ভাল ফল দিয়েছেন দলকে। বনগাঁ লোকসভা এলাকার সাত বিধানসভা আসনের মধ্যে স্বরূপনগর ছাড়া প্রতিটি আসনে জিতেছে বিজেপি।
এই রিপোর্ট কার্ডই কি শান্তুনুকে মন্ত্রিত্ব পেতে সাহায্য করল? নাকি আরও কারণ রয়েছে? রাজ্য বিজেপি-তে এমন আলোচনাও চলছে যে, আগামী দিনে যাতে নাগরিকত্ব প্রশ্নে আর ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই শান্তনুকে সরকারের অঙ্গ করে নেওয়া হল। তবে জল্পনা আরও বলছে, বিধানসভা ভোটে ভাল কাজের পুরস্কার দেওয়া হল শান্তনুকে। পাশাপাশি, নিশ্চিত করে রাখা হল ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সমাজের ভোটও।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা নিয়ে বেঁকে বসা শান্তনুকে বোঝাতে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছিল। বনগাঁর সাংসদ সেই সময় এমনটাও বলেন যে, তাঁর কাছে আগে মতুয়াস্বার্থ। পরে বিজেপি। শান্তনু তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, এমন জল্পনাও শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য সে সব নাকচ করে দেন শান্তনু।
শান্তুন যখন সিএএ কার্যকরের দাবিতে সরব, সেই সময়েই গত ২০ ডিসেম্বর বাংলায় ভোট প্রচারে এসে বোলপুরে সাংবাদিক বৈঠকে অমিত বলেছিলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এত বড় অভিযান করা সম্ভব নয়। কেবল বিধি প্রণয়নই বাকি আছে। করোনাভাইরাসের টিকা এসে গেলে এবং করোনার শৃঙ্খল (সাইক্ল) ভেঙে গেলে আমরা এই বিষয়ে ভাবব। যখন কাজ শুরু করব, তখন আপনাদের জানিয়ে দেব।’’ অমিতের কথা শুনে সে দিনই শান্তনু রায়গঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে দাবি করেছিলেন, অমিতকে স্বয়ং ওই ব্যাখ্যা দিতে হবে মতুয়াদের সামনে। এর পরে ঠাকুরনগরে গিয়ে শান্তনুকে বোঝান বাংলায় বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। সঙ্গে যান বিজেপি-র তৎকালীন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। পরে অমিতও গিয়েছিলেন ঠাকুরনগরে। তাঁ মঞ্চে ছিলেন শান্তনুও।
এ বার সেই শান্তনুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, বনগাঁ লোকসভা এলাকায় বিজেপি ভাল ফল করলে শান্তনুকে ‘পুরষ্কৃত’ করা হবে, এমনটা আগেই ঠিক ছিল। তাই শান্তনুর মন্ত্রী হওয়ায় চমক হওয়ার কিছু নেই। বিজেপি-র ১৮ জন সাংসদের মধ্যে বিধানসভা ভোটে সবচেয়ে ভাল ফল জন বার্লার আলিপুরদুয়ারে। সাতটি আসনের সবক’টিতেই জয় পায় বিজেপি। আর দক্ষিণবঙ্গে দলকে সবচেয়ে ভাল ফল দিতে পেরেছেন রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং বনগাঁর সাংসদ শান্তনু। লোকসভা নির্বাচনের মতো বিধানসভাতেও নবদ্বীপ ছাড়া বাকি ছ’টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে, বনগাঁয় হার শুধু স্বরূপনগরে। ঘটনাচক্রে, লোকসভা নির্বাচনেও ওই আসনে পিছিয়েই ছিল বিজেপি।
তবে শুধু বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল পাওয়াই নয়, রাজ্য বিজেপি-র একাংশের দাবি, আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েও শান্তনুকে মন্ত্রী করা হয়ে থাকতে পারে। কারণ, বিধানসভা ভোটে আশানুরূপ ফল না হওয়ায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন বিজেপি-র কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সে ক্ষেত্রে বিজেপি-র উপরে মতুয়া সম্প্রদায়ের আস্থা ধরে রাখাও শান্তনুকে পুরস্কৃত করার পিছনে অন্যতম লক্ষ্য হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত করোনার টিকাকরণের কাজ যতটা এগিয়েছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি সিএএ কার্যকরের পথে কেন্দ্র হাঁটবে বলে মনে করা হচ্ছে না। বিজেপি নেতারাই বলছেন, বড় শক্তি নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এখন সিএএ কার্যকর করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতায় সরব হবেন। ফলে হয়তো আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই উদ্যোগ নেবেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি-র একাংশের দাবি, সেই কারণে শান্তনুকেই মন্ত্রিসভার সদস্য করে নিলেন মোদী। যাতে তিনিও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকলাপের প্রত্যক্ষ ‘অংশীদার’ হয়ে থাকতে পারেন। ফলে তাঁর বিদ্রোহের সুযোগও কমে গেল।
তবে বিজেপি-র অন্য একাংশের বক্তব্য, বিষয়টা তেমন নয়। তেমন পরিস্থিতি হলে শান্তনু মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়েও আসতে পারেন। এই অংশের দাবি, বিধানসভায় ভাল ফলের পুরস্কারই দেওয়া হচ্ছে শান্তনুকে। পাশাপাশি, মাথায় রাখা হয়েছে মতুয়া ভোটের বিষয়টিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy