Advertisement
E-Paper

‘বাম’ মামার কাঁধে চেপে উত্থান, ট্রেকারের পাদানি থেকে ক্ষমতার অলিন্দে পা রাজনীতির শাহজাহানের

শাহজাহানের মামা মোসলেম শেখ ছিলেন সরবেড়িয়া এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা তথা পঞ্চায়েত প্রধান। জানা গিয়েছে, তাঁর হাত ধরেই কাঁচা টাকা চোখে দেখা শুরু হয়েছিল শাহজাহানের।

How has Shahjahan Sheikh of Sandeshkhali risen in politics

তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:০০
Share
Save

কথায় বলে ‘মামা-ভাগ্নে যেখানে, বিপদ নাই সেখানে’। সন্দেশখালির সরবেড়িয়া জানে, মামা-ভাগ্নে এক হলে কী হতে পারে। শুক্রবার সকাল থেকে খবরের শিরোনামে থাকা সন্দেশখালি এ-ও জানে, ক্ষমতা পেলে মামা-ভাগ্নের সম্পর্ক কোন খাতে বইতে পারে। তার অভিঘাত কী হয়! শুক্রবার সকালে অধুনা তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে ইডি অফিসারদের একটি দল তল্লাশিতে গিয়েছিল। তার পর স্থানীয়দের মারে মাথা ফেটে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়। এই ঘটনায় তোলপাড় বাংলার রাজনীতি। আন্দোলিত দিল্লিও। তখন সন্দেশখালিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে শাহজাহানের উত্থান কাহিনি। যার শুরুটা হয়েছিল বাম জামানায়। যা উল্কাগতি পায় শাহজাহান তৃণমূলের নেতা হওয়ার পর।

শাহজাহানের মামা মোসলেম শেখ ছিলেন সরবেড়িয়া এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা তথা পঞ্চায়েত প্রধান। জানা গিয়েছে, তাঁর হাত ধরেই কাঁচা টাকা চোখে দেখা শুরু শাহজাহানের। সৌজন্যে মাছের ভেড়ি। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভেড়ির কারবারের আগে শাহজাহানের পেশা ছিল অন্য। সন্দেশখালি-সরবেড়িয়া রুটে ট্রেকারের পাদানিতে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায়ের কাজ করতেন তিনি। তার পর মামা হাত রাখেন ভাগ্নের মাথায়। ক্রমশ বিত্তবান হতে থাকেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম জমানার শেষ ১২ বছর, সন্দেশখালি এলাকায় মোসলেম ছিলেন একটি বড় নাম। উত্তর ২৪ পরগনারই বারাসত ব্লকের শাসনের দিকে যেমন ভেড়ি নিয়ন্ত্রণ করতেন সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টার, তেমনই সন্দেশখালির ভেড়ি নিয়ন্ত্রণে মামা-ভাগ্নে জুটি কাজ করতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মামা সিপিএমের নেতা হলেও ভাগ্নে শাহজাহান সেই অর্থে কখনও নেতা ছিলেন না। নিজের এলাকায় কয়েকটি বুথে কেবল ভোট করাতেন। ট্রাকের পাদানি থেকে অর্থের স্বাদ পাওয়া শাহজাহান ক্ষমতার বৃত্তে থাকা শুরু করেছিলেন বাম জমানাতেই। তিনি সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অধুনা প্রয়াত অবনী রায়েরও ‘কাছের’ ছিলেন বলে খবর। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়া বুঝে ২০১০ থেকেই সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন শাহজাহান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সাল থেকেই শাহজাহান মোটামুটি পয়সা করা শুরু করে ফেলেছিলেন। যা অনেকের চোখেও লাগত। কিন্তু ভিত মজবুত করে রেখেছিলেন শাহজাহান। কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কার ছেলের অসুখ, কার সন্তানের বইখাতা কিনতে হবে— শাহজাহানের কাছে গেলেই মুশকিল আসান। ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। কিন্তু মামা মোসলেম তখনও সিপিএমে। এমনকি, সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতও দখলে রাখে বামেরা। কিন্তু মামা-ভাগ্নের দু’জনের পথ তখন দু’টি দিকে বেঁকে গিয়েছে। এক দিকে ভাগ্নে তৃণমূলের নেতা। অন্য দিকে মামা সিপিএম। মোসলেম যে বাহিনী তৈরি করেছিলেন, শাহজাহান তাতেও ভাঙন ধরাতে থাকেন। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, বছর কয়েক আগে মামাকে লাল পতাকা ছেড়ে ভাগ্নের দলে নাম লেখাতে হয়। শাহজাহান এখন তৃণমূলের সন্দেশখালি-১ ব্লকের সভাপতি। পাশাপাশি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। বিজেপির বক্তব্য, বাম জমানায় পেশিশক্তি দিয়ে ভেড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতেন শাহজাহান। তৃণমূল জমানায় সেটাই করেন প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে।

জেলার রাজনীতির ওয়াকিবহালদের অনেকের বক্তব্য, শাহজাহানকে তৃণমূলে আশ্রয় দিয়েছিলেন এখন জেলবন্দি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কারণ, সিপিএমের নেতা মামা মোসলেমকে প্রতিহত করতে ভাগ্নে শাহজাহানকেই তুরুপের তাস করেছিলেন বালু। বহুলচর্চিত কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার ফর্মুলায় গোটাটা হয়েছিল। অনেকের মতে, দানধ্যানের জন্য নিজের এলাকায় শাহজাহানের যে অপরিসীম জনপ্রিয়তা রয়েছে, তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে শুক্রবার সকালে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সামনে বেধড়ক মার খেয়ে রক্ত ঝরাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। তবে সরবেড়িয়ায় মুখে মুখে ফিরছে ট্রেকারের পাদানি থেকে রাজনীতির শাহজাহান হয়ে ওঠা নেতার উত্থান-কথা।

Shahjahan Sheikh Tmc Leader

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy