Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Classical Language

প্রাচীন বাঙালির সূত্র খুঁজেই ধ্রুপদী স্বীকৃতি এল বাংলার

ধ্রুপদী ভাষার মাপকাঠি হিসেবে কোনও ভাষার দেড় থেকে দু’হাজার বছরের পুরনো প্রত্নপুরাণকেই ধরা হয়। বাংলার ক্ষেত্রে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মহাস্থানগড়ের (এখন বাংলাদেশের বগুড়া) শিলালিপি মিলেছে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৭
Share: Save:

চার খণ্ড, ২২০০ পৃষ্ঠা। বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা আখ্যা দিয়ে তৈরি দাবিপত্রটি কৃশ নয়। ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বেশির ভাগ ভাষার দাবিপত্রের থেকেই তা কলেবরে বৃহৎ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। রসগোল্লার মতো বাংলা ভাষা নিয়েও বঙ্গ-ওড়িশা দ্বৈরথ সৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল, যা এড়িয়ে গিয়েছেন রাজ্যের গবেষকেরা।

প্রসঙ্গত, বছর দশেক আগেই ১১৯ পাতার দাবিপত্র পেশ করে ওড়িয়া ভাষা যে স্বীকৃতি পায়, তাতে চর্যাগীতিকেও ‘ওড়িয়া’ বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কার করা প্রাচীন গ্রন্থের নামও পাল্টে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিতর্কে না-ঢুকে বাংলা ভাষার দাবি মেলে ধরা গবেষকেরা বাংলা ভাষার প্রাচীনত্ব নিয়ে অনুসন্ধানের গভীরেই ডুব দিয়েছেন।

রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের অধীনে ‘ইনস্টিটিউট অব ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইএলএসআর) -এর তৈরি দাবিপত্রটি জানুয়ারিতে তৈরি হয়। রাজ্য সরকারের তরফে তা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সাহিত্য অকাদেমির কাছে পেশ করা হয়েছিল। নিয়ম মেনে রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের কাছে আর্জি এবং কেন্দ্রের মন্ত্রিসভার সায়, এই ভাবেই স্বীকৃতি আসে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

আইএলএসআর-এর স্কুল অব লিঙ্গুয়িস্টিক স্টাডিজ়-এর অধ্যাপক অমিতাভ দাসের নেতৃত্বে ভাষাতত্ত্ববিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ মিলে পাঁচ সদস্যের দল দাবিপত্রটি তৈরি করেছে। অমিতাভের কথায়, “উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দারুণ উৎসাহে কাজ করি। পাঁচ বছরের কাজ দু’বছরে সারা হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম প্রমাণ খোঁজা ছাড়াও, বাঙালিকে পেলেই বাংলারও খোঁজ মিলবে ভেবেই এগিয়েছি।”

ধ্রুপদী ভাষার মাপকাঠি হিসেবে কোনও ভাষার দেড় থেকে দু’হাজার বছরের পুরনো প্রত্নপুরাণকেই ধরা হয়। বাংলার ক্ষেত্রে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মহাস্থানগড়ের (এখন বাংলাদেশের বগুড়া) শিলালিপি মিলেছে। তাতে ব্রাহ্মী লিপিতে সংবঙ্গীয় (সম্যক রূপে বঙ্গীয়) শব্দটি তাৎপর্যবাহী বলে ধরছেন গবেষকেরা। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থেও বঙ্গদেশীয়দের প্রসঙ্গ। আবার অশোকের আমলে গিরনার শিলালিপিতে ‘দ্বাদশ’ শব্দটির বানান হিসাবে ব্রাহ্মী লিপিতে বাংলা উচ্চারণ রীতি মেনে চলা হচ্ছে বলেও গবেষকদের দাবি। অষ্টম শতকে প্রকাশিত সংস্কৃত-চিনা অভিধানটির সূত্রও দাবিপত্রটিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলা হয়েছে। লি য়েনের সংকলিত অভিধানটি ১৯২৯ সালে ফরাসিতে প্রকাশ করেন প্রবোধচন্দ্র বাগচী। তাতেও ৫০টির বেশি বাংলা শব্দ রয়েছে। অমিতাভ বলেন, “সংস্কৃত-চিনা অভিধানে বেশ কয়েকটি শব্দকে বাংলা বলে দাবি করা মানে, বাংলার প্রভাব বিশ্বের নানা প্রান্তেই ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে আইস, বইস, মাংস, মোটা, ভতর (ভাতার) শব্দগুলি রয়েছে।”

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, বাংলা ভাষা চর্চায় উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে উঠবে, অন্তত দু’টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ‘চেয়ার প্রফেসরের’ বেশ কিছু পদ তৈরি হবে। তবে এই সাফল্য কার কৃতিত্বে, তা নিয়েও রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। মেচেদায় শুভেন্দু অধিকারী প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। বালুরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও মুখ্যমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার কৃতিত্ব নস্যাৎ করেন। অন্য দিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক আগ্রহে এবং উপদেশে উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন আইএলএসআর গবেষণাপত্র প্রস্তুত করে কেন্দ্রের কাছে জমা দেয়। ব্রাত্য মুখ্যমন্ত্রীকে বাঙালি জাতির হয়ে কৃতজ্ঞতা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Classical Language Bengali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE