টিভিতে চ্যানেল বদলে দু’এক বার তারাপীঠের কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব দেখার চেষ্টা করেছেন অনুব্রত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এ বার আর প্রথা মেনে কৌশিকী অমাবস্যা পালন করা হল না অনুব্রত মণ্ডলের। প্রায় প্রতি বছরই তারাপীঠে পুজো দিতে আসা কালী-ভক্ত ‘কেষ্ট’ এ বছর গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে আসানসোল সংশোধনাগারে বন্দি। তাই চলতি বছরের কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব তাঁকে টিভিতে চোখ রেখেই কাটাতে হল। চ্যানেল বদলে তারাপীঠের উৎসব পালন দেখলেন তিনি। মাঝে টিভিতে সিনেমাও দেখেছেন অনুব্রত। জেলের অন্য বন্দিদের সঙ্গে গল্প করেও কিছুটা সময় কাটিয়েছে তিনি।
কৌশিকী অমাবস্যার সময় প্রায় প্রতি বার তারাপীঠে আসতেন বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত। দীর্ঘ ক্ষণ গর্ভগৃহে বিগ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে পুজো দিতেন। মাঝে এক বার পুজো দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে করজোড়ে প্রার্থনা করার ভঙ্গিতে কেঁদে ফেলতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। অনেক সময় আবার অনুগামীরাই তারাপীঠে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির মঙ্গল কামনায় কৌশিকী অমাবস্যায় যজ্ঞের আয়োজন করতেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারাপীঠে থেকে সেই যজ্ঞ দেখতেন অনুব্রত। এ বছরের কৌশিকী অমাবস্যায় সেই তৃণমূল নেতাই রয়েছেন আসানসোল সংশোধনাগারের হাসপাতাল কক্ষে। সাদা ফতুয়া পরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে-বসেই প্রায় সারা দিন কাটিয়ে দিলেন।
গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আপাতত জেলের ‘আইসোলেশন’ কক্ষে রাখা হয়নি তাঁকে। সংশোধনাগার চত্বরে ন’টি শয্যার একটি হাসপাতাল কক্ষে রয়েছেন তিনি। সেখানে অনুব্রতের সঙ্গে আরও ছ’জন রয়েছেন। জেলের হাসপাতালে থাকার সুবাদেই অন্তত টিভি দেখার সুযোগ পেয়েছেন তৃণমূল নেতা।
কারারক্ষীদের সূত্রে খবর, শুক্রবার ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল সকাল স্নান সেরে নেন অনুব্রত। স্নানের পর কক্ষের বাইরে দেওয়ালে লাগানো বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তিতে প্রণাম করেন তিনি। সকালের টিফিনে অনুব্রতকে মুড়ি-ছাতু দেওয়া হয়। দুপুরে খেয়েছেন ভাত, ডাল ও পাঁচমিশালি সব্জি। ডায়াবেটিস থাকার কারণে অল্পই ভাত খেয়েছেন তিনি। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর তিনি টিভি দেখতে বসেন অন্য বন্দিদের সঙ্গে। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনও সিনেমা, কখনও আবার গানের ভিডিয়ো দেখে সময় কাটিয়েছেন। কৌশিকী অমাবস্যার উৎসব নিয়ে টিভিতে কিছু হচ্ছে কি না, তা-ও দেখার চেষ্টা করেছেন। পরে অন্য বন্দিদের সঙ্গে তাঁকে গল্প করতেও দেখা যায়। এত বছর ধরে কী ভাবে কৌশিকী অমাবস্যা পালন করে এসেছেন তিনি, সে সবই অনুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে বলে কারারক্ষীদের সূত্রে জানা গিয়েছে।
বীরভূমবাসীর কাছে কৌশিকী অমাবস্যা ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ পরব। প্রতি বছর এই উৎসবে মাতেন অনুব্রত। তারাপীঠের পাশাপাশি বোলপুরের কঙ্কালীতলার মন্দিরে পুজোর আয়োজন করা হত। সেখানে নাম-গোত্র ধরে অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের নামে দেওয়া হত পুজো। নিরামিষ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হত বাড়িতে।
বিগত বছরগুলিতে এই পরবে রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ অনুব্রতের ছবি দেওয়া পোস্টারে ছেয়ে যেত। এ বছর তারও ব্যতিক্রম ঘটেছে। এ বার রাস্তার ধারে নানা জায়গায় দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে শুভেচ্ছা বার্তার ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। সব পোস্টার থেকেই বাদ পড়েছেন অনুব্রত। যা জেলার রাজনীতিতে এখনও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। ঘটনাচক্রে, আশিস রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন, ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর রামপুরহাট কিষান মান্ডিতে বুথভিত্তিক কর্মিসভায় সময় মেজাজ হারিয়ে বিধায়ক আশিসকে ‘অপদার্থ’ বলেছিলেন অনুব্রত। তারই ‘বদলা’ নিতে সুযোগ বুঝে আশিস এ বার অনুব্রতকে ‘মুছে ফেলতে’ চেয়েছেন। বিজেপির বীরভূম জেলা সাংগঠনিক সভাপতি ধ্রুব সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তৃণমূলের বোধোদয় হয়েছে। তাই গরু চোর, কয়লা চোর, বেকার যুবকদের চাকরি চোরদের ছবি আর ফ্লেক্সে টাঙাতে লজ্জা পাচ্ছে।’’
যদিও আশিস বলেন বলেন, ‘‘তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গঠন করেছেন। তাই পর্ষদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy