E-Paper

বিস্ফোরণের কোনও দায় নেই, তবুও বিপন্ন নিশ্চিন্তের আশ্রয়

সদ্য তৈরি বাড়ির জন্য প্রচুর ধার-দেনা করতে হয়েছে। তারই মধ্যে ফের ঘর মেরামত করবেন কী করে, সেই চিন্তাই রাতের ঘুম কেড়েছে সাহাবুদ্দিনদের।

An image of cracks in the houses due to blast

তছনছ: বিস্ফোরণের জেরে লন্ডভন্ড ঘর, ফাটল ধরেছে বাড়ির দেওয়ালেও। বুধবার দত্তপুকুরের মোচপোলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪২
Share
Save

বাড়ির দেওয়ালে লম্বা লম্বা ফাটল। চিড় ধরেছে ছাদেও। মাঝেমধ্যে চাঙড় খসে পড়ছে ঘরে। বাইরের দেওয়ালেও ফাটল স্পষ্ট। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ঘরে থাকা খাট মাঝ বরাবর ভেঙে গিয়েছে। দরজা, জানলা, বারান্দা ভেঙে অবস্থা এমন যে, বৃষ্টি হলেই জল ঢুকে আসছে। নতুন তৈরি ঘর থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়ে-সহ পরিবার নিয়ে কোনও মতে রাত কাটছে সিঁড়ির নীচে!

এমন ক্ষতির আশঙ্কাতেই লোকালয়ের ভিতরে বাজির কারবারের প্রতিবাদ করেছিলেন দত্তপুকুরের মোচপোলের বাসিন্দাদের একাংশ। যার খেসারত হিসেবে তাঁদের পুলিশি হেনস্থা ও ‘দাদা’দের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বলে অভিযোগ। ফলে, ক্ষতির আশঙ্কা জেনেও চুপ করে গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের পরে সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে মোচপোলের গোটা দশেক পরিবারের। তার মধ্যে বৃষ্টি বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির ভোগান্তি। এই সঙ্কট উতরোনোর পথ খুঁজছে পরিবারগুলি।

দত্তপুকুর থানার মোচপোলে বিস্ফোরণস্থল থেকে অল্প দূরেই বাড়ি তাজমিরা বিবির। দিন দশেক আগে ইটের দেওয়াল তুলে ছাদ বানিয়ে ঘরে থাকতে শুরু করেছিলেন। এখন নতুন সেই বাড়ির দেওয়ালেই বড় বড় ফাটল ধরেছে। ফাটলগুলো এমনই যে, ঘরে থাকার অবস্থা নেই। তাজমিরা বললেন, ‘‘যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন ছাদে ছিলাম। হঠাৎ কান ফাটানো আওয়াজ। দেখলাম, সামনের বাড়ির ছাদ থেকে চাঙড় প্রায় উড়ে এসে আমাদের বাড়ির উপরে পড়ল। দৌড়ে নেমে এসেছিলাম। ঘরে ঢুকে দেখি, বাড়ির সামনে কিছুই আস্ত নেই। ভেঙেচুরে সব খসে খসে পড়ছে।’’ তাজমিরার স্বামী সাহাবুদ্দিন আলি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। ধার- দেনা করে ঘর বানিয়ে দিন দশেক আগেই সেখানে উঠেছিলেন। সাহাবুদ্দিনের কথায়, ‘‘নতুন বাড়ির কিছুই আর অক্ষত নেই। জানলার কাচ, দরজার খানিকটা—সব ভেঙে গিয়েছে।’’

সদ্য তৈরি বাড়ির জন্য প্রচুর ধার-দেনা করতে হয়েছে। তারই মধ্যে ফের ঘর মেরামত করবেন কী করে, সেই চিন্তাই রাতের ঘুম কেড়েছে সাহাবুদ্দিনদের। অথচ, বাড়ির এমন বিপজ্জনক অবস্থায় পরিবার নিয়ে বসবাস করলে অন্য রকমের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘সবাই দায় ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত। আমাদের কথা কেউ ভাবছেনই না।’’

বিস্ফোরণে রাতারাতি পরিবার নিয়ে ঘরছাড়া তাজ মহম্মদ ও মুজিবর গাজি। সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন সামনের দোতলা বাড়িতে। তাজ ও মুজিবর জানাচ্ছেন, লোকালয়ে বেআইনি বাজি তৈরি হলে বিস্ফোরণ হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই সকলে প্রতিবাদ করেছিলেন। সেই সময়ে পুলিশকেও সব জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি দু’জনেরই।

তাজের কথায়, ‘‘ঘটনার সময়ে মাঠে কাজ করছিলাম। শব্দ পেয়ে এসে দেখি, গোটা বাড়ি লন্ডভন্ড। রান্নাঘর-সহ সর্বত্র ফাটল ধরেছে। রান্নাঘরের টালির চাল উড়ে গিয়েছে। তখন থেকেই বাড়িছাড়া।’’ সামনের বাড়ির প্রতিবেশী কয়েক দিনের জন্য থাকতে দিয়েছেন বলে জানালেন তাজ। বৃদ্ধা মাকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীকে বলেছেন, কয়েক দিনের জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঘুরে আসতে।

কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন? উত্তর খুঁজছেন বছর চল্লিশের যুবক। আপাতত নতুন করে বাড়ি মেরামত করার আর্থিক অবস্থা নেই বলেই জানাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি। তাদের কথায়, ‘‘নেতা-মন্ত্রীরা আসছেন। সবাই দেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ কোনও সাহায্যের কথা বলছেন না। কোনও কিছুতে না থেকেও আজ আমাদের বিনিদ্র রাত কাটাতে হচ্ছে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dattapukur Blast Fire Crackers Fire Cracker Factory

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।