গঙ্গাসাগর থেকে কলকাতায় ফেরার জন্য হেলিপ্যাডের পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বন্ধের নামে বাম ও কংগ্রেস ‘গুন্ডামি করেছে’ বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বন্ধের নামে সিপিএম দাদাগিরি করে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছে। এই কারণেই সিপিএম এখানে সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কেরলের সিপিএম তবু ভাল। একটা আদর্শ নিয়ে চলে। এখানে সে সব নেই। বাংলায় ওরা শুধু সর্বনাশা কাজ করে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বন্ধ বিরোধিতার সমালোচনা করে সিপিএম এবং কংগ্রেস উভয়েরই কটাক্ষ, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের বিরুদ্ধে ডাকা বন্ধ ব্যর্থ করতে নেমে মমতা আসলে কেন্দ্রের শাসকদের চোখে ‘ভাল থেকে’ তাদের নির্দিষ্ট বার্তা দিলেন। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের সোমেন মিত্র বিরোধী নেত্রী হিসাবে মমতার বন্ধ ডাকার কথা তুলে আরও বলেছেন, ‘‘মমতা যে পথে ক্ষমতায় এসেছেন, তাতে ওঁর মুখে বন্ধ বিরোধী কথা এবং কাজ মানায় না।’’
এ দিনের বন্ধকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেত্রী মমতার সঙ্গে রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেসের বিরোধ যে ভাবে ঘোরালো হয়ে উঠল, তার প্রতিফলন দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির আসন্ন বৈঠকে পড়বে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান। প্রকাশ্যে অবশ্য এই প্রসঙ্গে এ দিন কেউ কিছু বলেননি। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, এই রকম আবহে পরিস্থিতি যে অনুকূল থাকে না, তা সহজেই বোঝা যায়। মমতা ওই বৈঠকে গেলে সেখানে যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলবেন, তেমন ইঙ্গিতও এ দিন মিলেছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-র বিরোধিতায় বুধবার দেশ জুড়ে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটে কলকাতা-সহ এ রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনলাইনে বোমা রাখা, ওভারহেডে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, বাসে-গাড়িতে ভাঙচুর, আগুন, পথ অবরোধ, লোকজনের উপর হামলা, জোর করে দোকান বন্ধ করা— কোনও কিছুই বাদ যায়নি।
এ সবেরই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দুপুরে গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার আগে বলেন, ‘‘সিপিএম বাইক থামিয়ে যাত্রীকে মেরেছে। ট্রেনের নীচে বোমা রেখেছে। কারও কিছু হয়ে যেতে পারত। এ ভাবে আন্দোলন হয়?’’
যে সব দাবিতে এ দিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, মমতা নীতিগত ভাবে তার সবই সমর্থন করেন। কিন্তু সরকার এবং শাসক দল বন্ধের রাজনীতি কোনও মতে সমর্থন করবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। সেই মতো জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে পথে হাজির ছিল পুলিশ। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সেলিম তাই মমতার সমালোচনা করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে ভুলে গিয়েছেন, কোন পথে ক্ষমতায় এসেছিলেন! নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের রাজনীতির বিরুদ্ধে ডাকা ধর্মঘটে সারা দেশের মানুষ যোগ দিয়েছেন আর উনি পুলিশ দিয়ে, লোক দিয়ে সেই ধর্মঘট ভাঙছেন। নিজেদের কেলেঙ্কারি আড়াল করতে চান বলে এই ভূমিকা!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুরও বক্তব্য, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে যিনি ৭৩টা বন্ধ ডেকেছেন, বিধানসভায় ভাঙচুর করেছেন, তাঁর (মমতার) মুখে এ সব কথা মানায় না। নিজেই বলছেন কালা কানুন মানি না আবার সেই কালা কানুনের প্রতিবাদে গরিব মানুষের আন্দোলন পুলিশ দিয়ে ভাঙছেন। এ সব করে তিনি মোদী সরকারকে বার্তা দিতে চাইছেন।’’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন ফের বলেন, ‘‘বাংলায় দল ও সরকারের তরফে এনআরসি, এনপিআরের প্রতিবাদে আমরা প্রথম থেকে পথে আছি। আন্দোলন করতে হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দলগত ভাবে এ নিয়ে আন্দোলনে আছি। রাজ্য সরকার হিসেবেও প্রতিবাদ করছি। তার জন্য বুকের পাটা চাই।’’ সিপিএমকে কটাক্ষ করে মমতা আরও বলেন, ‘‘যাক না দিল্লিতে। সেখানে তো ওদের অফিস আছে। সেখানে আন্দোলন করুক না! ক’টা আন্দোলন করেছেন ওখানে? এখানে আমরা আছি। মানুষ শান্তিতে আছে। এখানে কিছু করার দরকার নেই। যেখানে আমরা নেই, সেখানে গিয়ে আন্দোলন করুন।’’ এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘৩৪ বছরে সিপিএম রাজ্যে কিছুই করেনি। আর এখন আমরা যা তৈরি করছি, ওরা তা নষ্ট করছে। এ সব করলে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ করবেই।’’
এ দিনের বন্ধ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাদের না আছে সংগঠন, না সমর্থন, তারা অস্তিত্ব বাঁচাতে এই ধর্মঘট ডেকেছিল। রাজ্যের মানুষ আগেই বন্ধ সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়েছে। বামেরা হতাশ হয়ে বন্ধে ভাঙচুর করে খবরে আসার চেষ্টা করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy