বিক্ষোভ সামলাতে শ্যাম সেলের গেটে পুলিশ। ছবি:ওমপ্রকাশ সিংহ।
ফের গণ্ডগোল বর্ধমানের জামুড়িয়ার শ্যাম সেল কারখানায়। তাতে আবারও নাম জড়াল শাসকদলের। কারখানার কর্মীদের সঙ্গে বচসার জেরে রবিবার শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর কারখানার গেটে যুব তৃণমূলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তার জেরে উৎপাদন বন্ধ রইল দিনভর।
পুলিশ জানিয়েছে, রণবীর সিংহ যাদব ও গোবিন্দ সিংহ নামে দুই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্যাম সেলের এজিএম (মানবসম্পদ) সুমিত চক্রবর্তীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও রাতে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সুমিতবাবু বলেন, “পুলিশের নির্দেশে থানায় এসেছিলাম। তবে, কেন এমন ঘটনা ঘটল তা আমাদের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়।” আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “সুমিতবাবুকে সোমবার ফের থানায় দেখা করতে বলা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কয়েক মাস আগে এই কারখানাতেই তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। এ দিনের বিক্ষোভে অবশ্য ওই দু’জনকে দেখা যায়নি। তবে, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন জামুড়িয়া ২ ব্লকের যুব তৃণমূল নেতা অভিজিৎ চক্রবর্তী।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দিনের শিফ্টের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কারখানার চার জন কর্মী (যাঁরা শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সমর্থক) কারখানা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের বাধা দেন। তার জেরে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। আরও কয়েক জন কর্মী নিরাপত্তারক্ষীদের ঘিরে ধরেন। ঘটনাস্থলে আরও এক নিরাপত্তারক্ষী চলে আসেন। কারখানার এক কর্মীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পর কর্মীরা নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে তেড়ে গেলে গোবিন্দ সিংহ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালান বলেও অভিযোগ। খবর ছড়াতেই তৃণমূলের নেতৃত্বে কারখানার বেশিরভাগ কর্মী ও গ্রামবাসীদের একাংশ বিক্ষোভ শুরু করেন। নিরাপত্তারক্ষী ও কারখানার কর্তৃপক্ষকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে। অভিজিৎবাবুর দাবি, “নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই তাঁরা গুলি চালিয়েছেন। সেই কর্তৃপক্ষ কে, সেটা পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লক সভাপতি তাপস চক্রবর্তীর দাবি, “ওই কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র ইউনিট সম্পাদক মণিশঙ্কর মিশ্র-সহ চার তৃণমূল কর্মীকে হেনস্থা করা হয়েছে। তাই এ দিন তৃণমূল কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান।”
গত জুনে শ্যাম সেল কারখানায় তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, রেল সাইডিংয়ে ঠিকাদারি পেতে অলোক ও চঞ্চলের নেতৃত্বে দাদাগিরি চলছে। অভিযোগ ওঠে, শাসকদলের ওই দুই নেতা কারখানার এক আধিকারিককে প্রাণনাশের হুমকি দেন। সাইডিংয়ের কাজ জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিল্পাঞ্চলের এক আইএনটিটিইউসি নেতার কাছে কর্তৃপক্ষ সমস্যা মেটাতে গেলে সেখানেও হুমকি দেয় অলোকেরা। পরে তৃণমূল অলোক দাসকে বহিষ্কার করে। এ দিনের বিক্ষোভের পিছনেও তাঁদের ইন্ধন রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও অলোকের দাবি, “রবিবার আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না।”
তবে, এ দিনের বিক্ষোভকে তৃণমূলের ‘দাদাগিরি’ হিসাবেই দেখছেন বিরোধীরা। বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, “শূন্যে হলেও গুলি চালনা নিন্দনীয়। কিন্তু, তার আগে কী হয়েছিল সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। আমি যতদূর জানি, আইএনটিটিইউসি সমর্থকরা ওই দুই নিরাপত্তারক্ষীকে ঘিরে ফেলেছিলেন।” আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “আইএনটিটিইউসি সমর্থকদের প্ররোচনাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy