ফাইল চিত্র।
আপাত স্বস্তি বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অনুব্রতর বিরুদ্ধে চার সপ্তাহ কোনও কড়া ব্যবস্থা নিতে পারবে না সিবিআই। এমনকি গ্রেফতারও করা যাবে না তাঁকে। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চে মামলাটি উঠলে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আদালত এটাও বলেছে, অনুব্রতর বিরুদ্ধে তদন্ত জারি রাখতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। একই সঙ্গে আদালত জানিয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল প্রধান অভিযুক্ত নন। তাঁর নাম এফআইআরে নেই। তবে তাঁকে বোলপুর বা দুর্গাপুরে ডেকে জিজ্ঞাসা করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এর পরই সিবিআইয়ের কাছে বিচারপতি সরাসরি জানতে চান অনুব্রতকে কি গ্রেফতার করার বিষয় আছে? তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি আছেন। তখন সিবিআই জানায়, এই মুহূর্তে তাঁকে গ্রেফতারের প্রশ্ন নেই। তবে সমন পাঠালে তাঁকে আসতে হবে। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে আরও জানান, স্বাস্থ্য নিয়ে অনুব্রত যা বলছেন সেটা সত্যি নয়। বোলপুরেও তাঁকে ডাকা হয়নি।
অনুব্রতর আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায় আদালতে জানান, অনুব্রতর হাই ব্লাড সুগার, কিডনি এবং সিওপিডির সমস্যা আছে। নোটিস পাওয়ার পর স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরেও বোলপুরের বাইরে প্রায় ৫৪ কিমি দূরে দুর্গাপুরে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। অনুব্রত আইনজীবী এর পরই বলেন, “সাক্ষী হিসেবে ডাকা হলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। কারণ ১৪ জানুয়ারির পর ১৫ জানুয়ারি ১৬০ ধারায় নোটিস পাঠানো হয়েছে। উত্তর দেওয়ার পরেও ফের ৩১ জানুয়ারি নোটিস পাঠায় সিবিআই।” তবে রক্ষাকবচ দিলে অনুব্রত যেতে রাজি দুর্গাপুরে। আদালতে এমনই জানান অনুব্রতর আইনজীবী।
তখন পাল্টা সিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, “অনুব্রতকে অভিযুক্ত হিসেবে ডাকা হচ্ছে না। সাক্ষী হিসেবে ডাকা হচ্ছে। বলছেন দুর্গাপুরে যাবেন শর্ত দিলে। তা হলে স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যা নেই তাঁর। মিথ্যে বিবৃতি দিচ্ছেন। কিডনি অঙ্গ, কোনও রোগ নয়। তা হলে নোটিস না মানার কারণ কি?”
এর পরই আদালত জানায়, বৃহস্পতিবার ১১ টায় হাজিরার কথা ছিল অনুব্রতর। সেই সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। তাই পুরনো নোটিস কার্যকরী নয়। সিবিআইকে নতুন করে নোটিস দিতে হবে। দুর্গাপুরেই দিতে পারে। তবে সিবিআইকে তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে অনুব্রতকে। চার সপ্তাহ পর সিবিআইকে হলফনামা জেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার পর মামলার ফের শুনানি হবে।
অনুব্রতর অন্য আইনজীবী সঞ্জীব কুমার দাঁ বলেন, “যদি প্রয়োজন মনে হয় তা হলে সিবিআই অনুব্রত মণ্ডলকে ডাকতে পারে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না।” তাঁর কথায়, “আদালত সিবিআইয়ের কথায় সন্তুষ্ট ছিল না। নোটিস নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছে আদালত।”
গত ২ মে, বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিন, বীরভূমের ইলামবাজারে বিজেপি কর্মী গৌরব সরকারকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়ার পর খুনের মামলায় বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হন। কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ-সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে। এর পর বিজেপি কর্মী খুনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রতকে। কিন্তু অনুব্রত জানান, তিনি অসুস্থ। তাই এখন সিবিআই দফতরে হাজির হতে পারবেন না।
এর পরই বুধবার গ্রেফতারি থেকে রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অনুব্রত। আদালতকে তিনি জানান, তদন্তে সিবিআইকে সমস্ত রকম সহায়তা করতে রাজি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ যেন না করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy