ফাইল চিত্র।
ধর্মতলায় আগামী ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহিদ সমাবেশ’। শাসক দলের ওই কর্মসূচি উপলক্ষে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশিকা জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, কোনও দলীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে এমন ভাবে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে বলার আগাম নির্দেশিকা জারি নজিরবিহীন। এবং ২১ জুলাইকে কেন্দ্র করে এমন সরকারি নির্দেশিকা এই প্রথম জারি হল বলেই জানা যাচ্ছে। যেখানে ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবস’ বলেই স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাসক দলের কর্মসূচির জন্য সরকারি নির্দেশিকা জারির এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। শাসক দলের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, গত বছর বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপুল জয়ের পরে এটাই প্রথম সমাবেশ। তার উপরে কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর সমাবেশ হয়নি। তাই এ বার নজিরবিহীন ভিড় হবে ধরে নিয়েই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গত ৭ জুলাই রাজ্য পুলিশের এডিজি (প্রশিক্ষণ) এবং ট্র্যাফিক অ্যান্ড রোড সেফটি-র অতিরিক্ত দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজি একটি চিঠি পাঠান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবকে। সেখানে অনুরোধ করা হয়, আসন্ন ‘শহিদ দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নিকটবর্তী সমস্ত সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেন মেডিক্যাল টিম মোতায়েন রাখা হয়। পাশাপাশি জানানো হয়, ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত মজুত রাখতে হবে। ওই চিঠিতে আরও জানানো হয়, ওই ‘শহিদ দিবস’ অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষের ভিড় হবে। তাই মেডিক্যাল টিম ও ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির জন্য যেন প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করা হয়। এবং এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও পরিষেবা আগামী ১৯ জুলাই থেকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত বহাল রাখতে হবে।
এর পরে গত ১৩ জুলাই রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা একটি নির্দেশিকা জারি করে পাঠিয়ে দেন সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। তাতে ওই পুলিশ-কর্তার চিঠির কথা উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নিকটবর্তী প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার, চিকিৎসক, প্যারামেডিক্যাল কর্মী-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদিও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বহু জেলা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আসেন। রাস্তায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আগাম ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছিল। সেই মতোই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’
বিভিন্ন মহলে অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, শাসক দলের কর্মসূচি বলেই কি আগাম ব্যবস্থাপনা রাখার প্রস্তুতি? কারণ, এমন ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের ‘শহিদ দিবস’ উল্লেখ করে প্রশাসনের তরফে চিঠি বা নির্দেশিকা আগে দেখা যায়নি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল আর নবান্ন একই ব্যাপার, এ তো জানা কথা! কিন্তু এমন ব্যবস্থা এ বারই প্রথম রাখতে হচ্ছে কেন? সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, জেলায় জেলায় শাসক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথেও সেই বিরোধের ছাপ পড়তে পারে ধরে নিয়েই কি আগাম ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ? রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এটা অস্বাভাবিক নয়। এমন নির্দেশিকাই প্রত্যাশিত ছিল। প্রশাসনের রাজনীতিকরণের নির্লজ্জ উদাহরণ! এ রাজ্যে প্রশাসন, পুলিশ, নেতা-নেত্রী, শাসক দলের মধ্যে সূক্ষ্ম বিভাজনটুকুও নেই। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।’’
তৃণমূল নেতা তাপস রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রতি বার ২১শে-র সমাবেশ আগের বারের সমাবেশকে ছাপিয়ে যায়। বিধানসভা ভোটে জয়ের পরে এ বার প্রথম ২১ জুলাই, তার উপরে গত দু’বছর সমাবেশ হয়নি। তাই অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ভিড় হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সেই অনুযায়ীই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। আমরা সকলেই চাই, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy