প্রতীকী ছবি।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ১০ শতাংশ বঙ্গবাসী জীবনের কোনও না কোনও স্তরে মানসিক অসুস্থতার শিকার। এই অবস্থায় রাজ্যবাসীর মনের খবর পেতে চায় স্বাস্থ্য দফতর। সেই লক্ষ্যে গ্রামবাসীদের মানসিক অসুখের হদিস পেতে এএনএম বা অগ্জ়িলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফারি, আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য ভবন।
কিন্তু সূচনাতেই সেই প্রকল্প ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আশাকর্মীদের অনুযোগ, পারিশ্রমিক কম, অথচ একের পর এক বাড়তি কাজের ভার চাপানো হচ্ছে তাঁদের উপরে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীরা বলছেন, নিছক রোগ নির্ণয়ে মানসিক রোগীদের কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
শহর ও জেলায় মেডিক্যাল কলেজ এবং জেলা হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছতে হলে বিকল্প পদ্ধতি দরকার। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস’ বা নিমহ্যানসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এএনএম এবং আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। ‘‘মানসিক রোগীরা নিজেদের সমস্যার কথা সকলের কাছে বলতে চান না। নিজে থেকে হাসপাতালে আসা তো দূরের কথা। তাই বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার সময়েই এএনএম, আশাদিদিরা যাতে গ্রামাঞ্চলের মানসিক রোগীদের চিহ্নিত করতে পারেন, সেই বন্দোবস্ত হচ্ছে,’’ বলেন স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ২০ হাজার নার্স এবং ৫০ হাজার আশাকর্মীকে এই কাজের জন্য ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ডিজিটাল অ্যাকাডেমিতে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে চিকিৎসক, নার্সদের দক্ষতা বাড়াবেন নিমহ্যানসের প্রশিক্ষকেরা। কারও চিকিৎসার প্রয়োজন আছে মনে করলে এএনএম এবং আশাকর্মীরা তাঁকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা জোগাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোও বাড়ানো হবে।
সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই স্বাগত।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, বেসরকারি ভাবে অনেক জনমানস কর্মী এই কাজ করে থাকেন। তাঁদের কাজে লাগানো হচ্ছে না কেন? রত্নাবলীদেবীর বক্তব্য, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়। নিমহ্যানসের প্রশিক্ষণ শুধু রোগ চিহ্নিতকরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, সন্দেহ আছে। তা ছাড়া আশাকর্মীদের এমনিতেই অনেক কাজ করতে হয়। সামান্য পারিশ্রমিকে বাড়তি কাজের চাপ তাঁরা কী ভাবে নেন, সেটাও দেখার।
আশাকর্মী ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা ইশমত আরা খাতুন বলেন, ‘‘প্রসূতি, নবজাতকদের স্বাস্থ্যরক্ষাই আশাকর্মীদের প্রাথমিক দায়িত্ব। কিন্তু দিন দিন যে-ভাবে তাঁদের কাজের পরিধি বাড়ছে, তাতে কোনও কিছুই ভাল ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আশাকর্মীরা নিজেদের বাড়িতে তেমন সময় দিতে পারছেন না। কম পারিশ্রমিকের বিষয়টিও রয়েছে। আমাদের মনের কথা কে শুনবে?’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, গ্রামের কোনও বাড়িতে গেলে সেই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে আশাকর্মীদের কথা হয়। সেই কথাবার্তার ফাঁকে হয়তো আশাকর্মীরা জেনে নিতে পারেন, পরিবারের কোনও সদস্য হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সেই সদস্যের ঘুম হচ্ছে না ঠিকমতো। খাবারে রুচি নেই। ‘‘এগুলো যে অবসাদের লক্ষণ, তা বুঝে কী করতে হবে, সেই পরামর্শ তাঁরা দেবেন। এতে খুব বেশি কাজ বাড়বে বলে মনে হয় না,’’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy