—প্রতীকী ছবি।
আচমকাই গত এপ্রিলে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছিল, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই ওই মৃত্যু। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজখবরের পরে সম্ভাব্য যে কারণটি সামনে আসে, তা হল কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেই এমন ঘটেছে। গুণগত মানের পরীক্ষায় পাঠানো হয় প্রসব পরবর্তী চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওই সব ওষুধ। দেখা যায়, সেই পরীক্ষায় তারা ‘উত্তীর্ণ’। তা হলে কী কারণে এমন ঘটল? বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এখন জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
সূত্রের খবর, ২০২৩-’২৪ আর্থিক বর্ষে রাজ্যে ১১৬২ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়। অর্থাৎ, প্রতি মাসের হিসাব ৯৬-৯৭ জন করে মারা গিয়েছেন। সেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে রাজ্যে ১০৭ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩-এর এপ্রিলে সংখ্যাটি ছিল ১০৩। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে, বিষয়টি ততটা অস্বাভাবিক না-ও লাগতে পারে। কিন্তু তলিয়ে দেখলে অনুমান করা যাচ্ছে, এই সমস্ত মৃত্যুর মধ্যে কোথাও একটা যোগসূত্র আছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাজ্যের চারটি জেলায় প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা ২০২৩-এর এপ্রিলের তুলনায় বেশ খানিকটা বাড়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজে ৭ জন (গত বছর ছিল ২), দার্জিলিংয়ে ৭ (গত বছর-৩), পূর্ব বর্ধমানে ১১ (গত বছর-৯) পূর্ব মেদিনীপুরে ৬ (গত বছর-১) প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। বাকি অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেও সংখ্যাটি ১-২ করে বেশি ছিল। কারণ জানতে রিপোর্ট তলব করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। নির্দেশ দেন ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষার। শুক্রবার স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘ওষুধ নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠলেও ব্যবহৃত ওষুধ পরীক্ষা করে কোনও সমস্যা পাওয়া যায়নি। প্রসূতি মৃত্যুর অডিট কমিটির বিশেষজ্ঞদের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।”
জানা যাচ্ছে, ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যালের বিষয়টি নজরে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্যভবন। কারণ, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ওই হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি। অর্থাৎ মাসে একটি করে। কিন্তু শুধু এপ্রিলেই তা সাতটি হয়ে যায়। খবর আসতে থাকে অন্য কয়েকটি জেলা থেকেও। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব। সেখানে জেলাস্তরের মেডিক্যাল কলেজে স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশের কম হাজিরা নিয়েও তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন বলে খবর।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, বেশি মৃত্যুর খবর যে চার জায়গা থেকে এসেছিল, সেই সব জায়গাতেই প্রসূতিদের সিজ়ারের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ঘটেছে। এর পরে মে মাসে ওই চার জায়গা-সহ অন্য কিছু মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষামূলক ভাবে অন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তাতে বেশ কিছু জায়গাতেই মৃত্যুসংখ্যা কমে দাঁড়ায় শূন্যতে। তবে, আবারও পুরনো ওষুধ (এপ্রিলে যা ব্যবহার হয়েছিল) প্রয়োগ শুরু হয়েছে প্রায় সর্বত্রই। তাতেও কোনও অঘটনের খবর এখনও নেই। একটি মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কথায়, “হতে পারে, একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের ওষুধে গোলমাল ছিল। সেগুলি যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানেই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু নমুনাগুলি কী ভাবে পরীক্ষায় পাশ করল, তা বোঝা যাচ্ছে না।”
জানা যাচ্ছে, প্রসূতিদের জরায়ু মুখ খোলার জন্য ইঞ্জেকশন, অ্যান্টিবায়োটিক ও তিন ধরনের স্যালাইন দেওয়া হয়। এর মধ্যে কোন ওষুধের জন্য সমস্যা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, মৃত প্রসূতিদের অধিকাংশই সিজারের পরে ‘ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোঅ্যাগুলেশন (ডিআইসি)’-এ আক্রান্ত হন। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যালে আট জনেরই তা হয়েছিল। রক্তের রোগের চিকিৎসকেরা জানান, কোনও সংক্রমণ বা অন্য কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে ‘ডিআইসি’ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ শরীরের যে সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার দরকার নেই, সেখানে প্রথমে তা হয়। তার পরে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে, অন্য কোনও জায়গা থেকে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাতে প্লেটলেটও কমে যায়। গোটা বিশ্বেই প্রসূতি মৃত্যুর নেপথ্যে এটি বড় কারণ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, সিজারের পরে প্রসূতিদের যোনিদ্বার, স্যালাইনের চ্যানেল ও পেটের কাটা অংশ দিয়েই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। যার ফলে তাঁদের শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। প্রসঙ্গত, দেশে প্রসূতি মৃত্যুর হার কমানোর উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রতি এক লক্ষের মধ্যে দেশে এখন মৃত্যুর হার ৯৭। রাজ্যে সেই সংখ্যা ৯৫-এর নীচে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটি এখনও ৯৭ থেকে ১০০-র মধ্যেই রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy