Advertisement
E-Paper

শুক্রে তিনি শেঠ লক্ষ্মণের মঞ্চে সংবর্ধনা নিতে, শনিতে তাঁর নামাঙ্কিত হাসপাতাল উদ্বোধনে অভিষেক! কে এই ‘গুপ্ত’ জগন্নাথ

২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’টি ছবি তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ গুপ্তকে ঘিরে। শুক্রবার তিনি ছিলেন লক্ষ্মণের মঞ্চে। আবার শনিবার বিকালে তাঁর সংস্থার আমন্ত্রণেই যাচ্ছেন অভিষেক। সেখানেও থাকবেন তিনি। শুক্রবার থেকেই শাসকদলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল জগন্নাথকে ঘিরে। কৌতূহল জোড়াফুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে পদ্মবনেও।

He was felicitated by Laxman Seth\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s organization on Friday, his hospital will inaugurate by Abhishek Banerjee on Saturday, who is Jagannath Gupta

জগন্নাথ গুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৯
Share
Save

শুক্রবার তিনি বজবজ থেকে হলদিয়া গিয়েছিলেন। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা অধুনা কংগ্রেসি লক্ষ্মণ শেঠের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁকে সংবর্ধনা দিল। সম্মান নিয়ে সন্ধ্যার পরে ফিরেছেন বজবজে। ফেরাটা জরুরি ছিল। শনিবার তাঁকে যেতে হবে উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। সেখানে তাঁরই নামাঙ্কিত নতুন হাসপাতালের উদ্বোধন করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি জগন্নাথ গুপ্ত। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’টি ছবি তৈরি হচ্ছে ‘গুপ্ত’ জগন্নাথকে ঘিরে। একটিতে তাঁর পাশে একদা হলদিয়ার প্রতাপশালী নেতা। অন্যটিতে তাঁর পাশে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। শাসকদলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে জগন্নাথকে ঘিরে। সে কৌতূহল জোড়াফুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে পদ্মবনেও। কে তিনি?

জগন্নাথের বয়স বাহাত্তর। করিৎকর্মা মানুষ। জন্মসূত্রে উত্তর ভারতীয়। সে কারণেই বাংলায় ঈষৎ হিন্দির টান। কিন্তু বাংলা বলতে বা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না। হওয়ার কথাও নয়। গত ৫০ বছর ধরে রয়েছেন এই বাংলায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে। তাঁর সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলা যায় না। প্রথমে ফোনটি ধরেন তাঁর ম্যানেজার। ফোনকারীর পরিচয় জেনে জগন্নাথের অনুমতি পেলে তখনই মোবাইল চালান করেন মালিকের হাতে। তখন কথা শুরু করেন জগন্নাথ। প্রথমে তেল পরিশোধনের ব্যবসা করতেন। যাকে স্থানীয়েরা বলে থাকেন ‘কাটা তেলের ব্যবসা’। তবে জগন্নাথ বলেন ‘অয়েল রিফাইনিং’। সেই ব্যবসায় লাভ হওয়া লক্ষ্মী থেকেই দিক পরিবর্তন করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অয়েলের ব্যবসা করতে করতেই মনে হয়েছিল, এ বার একটু এডুকেশনটা করতে হবে! তার পরে তৈরি করি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।’’

২০০৮ সালে জগন্নাথ তৈরি করেন বজবজ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অফ টেকনোলজি। জগন্নাথ নিজমুখে বলেননি। তবে তাঁর উত্থান সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা মনে করেন, সম্ভবত ‘এডুকেশনটা করতে করতে’ তাঁর মনে হয়েছিল, ‘হেল্থ’টাও করতে চান। তাঁর ব্যবসার নোঙর ফেলেছিলেন বজবজেই। ২০১৮ সালে বজবজেই তৈরি করেছিলেন নিজের নামে ‘জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল কলেজ’। তিনিই এ বার প্রকাণ্ড হাসপাতাল খুলতে চলেছেন কল্যাণী এক্সপ্রেসের ধারে। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে। তারও নাম তাঁরই নামে— ‘জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল’। জীবৎকালে নিজের নামে প্রতিষ্ঠান গড়ার নজির যে একেবারে নেই তা নয়। মহারাষ্ট্রে আস্ত স্টেডিয়াম তৈরিরও নজির ছিল। তার জন্য এলেমও লাগে।

সম্ভবত সেই এলেমের জোরেই জগন্নাথ দক্ষিণ থেকে তাঁর কর্মকান্ডের নোঙর তুলে আসছেন উত্তর ২৪ পরগনায়। শনিবার তাঁর নামাঙ্কিত নতুন হাসপাতালের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনেই যাচ্ছেন অভিষেক। ঘটনাচক্রে, জগন্নাথ যাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা। সেই এলাকাতেই তাঁর ব্যবসার শিকড়। এ-ও এক ঘটনাচক্রই যে, যে সোদপুরে হাসপাতাল উদ্বোধনে যাচ্ছেন অভিষেক, সেই সোদপুরের আরজি করের নির্যাতিতার বাড়ি।

একটা সময়ে চুটিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন জগন্নাথ। এখন আর খেলেন না। বয়স বেড়েছে। খেলা দেখতে পছন্দ করেন। তবে সেই সুযোগও খুব একটা পান না। ব্যবসা বেড়েছে। চাপও। সময় কই! পাঁচ সন্তান জগন্নাথের। তিন কন্যা, দুই পুত্র। তিন কন্যার দু’জন থাকেন বিদেশে। এক জন ব্রিটেন। অন্য জন আমেরিকা। বড় মেয়ে থাকেন কলকাতাতেই। সেই কন্যার নামেই বজবজে রয়েছে ‘আরতি নার্সিংহোম’। যা দেখাশোনা করেন জগন্নাথের বড় জামাই। জ্যেষ্ঠপুত্র দেখাশোনা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কনিষ্ঠ পুত্র চিকিৎসক। তিনি লন্ডন-কলকাতা মিলিয়ে মিশিয়ে থাকেন। আশ্চর্য নয় যে, বাবার নতুন প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন চিকিৎসক পুত্র।

কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে যে হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, তার প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ সম্পন্ন হলে এই হাসপাতালে থাকবে ১২০০ শয্যা। জগন্নাথের সংস্থার দাবি, আধুনিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর নিরিখে পূর্ব ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে তাদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এমন এক ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ প্রকল্পের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত কাউকে কেন উদ্বোধনে ডাকলেন না? কেন অভিষেককেই ডাকলেন? জগন্নাথের জবাব, ‘‘যাঁকে পাব, তাঁকেই তো ডাকব! আমি ডাকলেই যে সকলে আসবেন, তার কী মানে আছে বলুন!’’ বলেই আনন্দবাজার ডট কমের সাংবাদিককে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেলেন, ‘‘আপনি আসবেন কিন্তু।’’

সপ্রতিভ কণ্ঠ শুনে মনে হচ্ছিল, কে বলে জগন্নাথ ‘গুপ্ত’? তিনি ব্যাপ্ত চরাচর!

Jagannath Gupta Abhishek Banerjee Hospital Inaugration laxman seth

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}