Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
J. K. Rowling

বক্সার ফরেস্ট গাইডকে নিয়ে কোনও বই লিখছেন না, জানালেন রোলিং

প্রথম জীবনে নেত্রপ্রসাদ ছিলেন বনদফতরের ঠিকা ‘ফায়ার ওয়াচার’।

বক্সার জঙ্গলে নেত্রপ্রসাদ।—নিজস্ব চিত্র।

বক্সার জঙ্গলে নেত্রপ্রসাদ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৬
Share: Save:

প্রথম জঙ্গলে পা বাবা মধুসূদন শর্মার হাত ধরে। তখনও সেই কিশোর জানত না, এই জঙ্গল এক দিন তাঁর জীবন হয়ে উঠবে! জঙ্গলের গাছপালা, লতা-গুল্ম থেকে প্রাণ— এরাই হয়ে উঠবে তাঁর রুজি-রুটির ভরসা। দু’দশকের বেশি সময় ধরে বক্সা টাইগার রিজার্ভের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো নেত্রপ্রসাদ শর্মার ঝুলিতে তাই রয়েছে অগুন্তি ‘জংলিগল্প’। অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি কোনও রকমে পেরনো বছর চল্লিশের নেত্রপ্রসাদের এই অভিজ্ঞতাকে সমীহ করে চলেন বন দফতরের কর্তা থেকে বিশেষজ্ঞরা।

বনজঙ্গল, পাখপাখালি আর বক্সার প্রাণীকুল নিয়ে দিব্যি ছিলেন নেত্রপ্রসাদ। কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতার সেই ভাঁড়ারই এ বার তাঁকে এক অদ্ভুত বিভ্রান্তির মুখোমুখি নিয়ে গিয়েছে। জঙ্গল লাগোয়া রাজাভাত খাওয়ার পাম্পু বস্তিতে জন্ম ইস্তক বড় হয়েছেন নেত্র। বাবা মধুসূদনের ছিল বীজের ব্যবসা। বন দফতরও শাল,শিশু, শিরিষের বীজ কিনত তাঁর কাছ থেকে। সেই সূত্রেই নেত্রপ্রসাদের জঙ্গলে যাওয়া-আসা শুরু। বিভ্রান্তি কোথায়? ফোনে নেত্রপ্রসাদ বললেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শুনলাম, খবরের কাগজে বেরিয়েছে যে, আমাকে নিয়ে জে কে রোলিং বই লিখেছেন! প্রথমে বুঝতেই পারিনি কে এই রোলিং! পরে পরিচিত কয়েক জন বোঝালেন হ্যারি পটার সিরিজের লেখক! তিনিই নাকি আমাকে নিয়ে বই লিখেছেন!” তার পর থেকে সবাই তাঁকে প্রশ্ন করছেন। একের পর এক ফোন আসছে। চেনা-অচেনা মানুষের সঙ্গে সেই তালিকায় রয়েছে সংবাদমাধ্যমও। নেত্রপ্রসাদের কথায়, ‘‘ওই লেখিকার সঙ্গে আমার জীবনে কোনও দিন দেখা হয়নি। তিনি আমার কথা জানবেনই বা কী করে? আর আমাকে নিয়ে বই-ই বা লিখবেন কোথা থেকে?”

প্রথম জীবনে নেত্রপ্রসাদ ছিলেন বন দফতরের ঠিকা ‘ফায়ার ওয়াচার’। অর্থাৎ জঙ্গলে আগুন লাগলে বন দফতরকে খবর দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। এর পর অরণ্য রক্ষা কমিটির সদস্য। তার পর পাকাপাকি ভাবে রুজি-রুটির টানে জঙ্গল-গাইডের পেশা বেছে নেন নেত্রপ্রসাদ। তবে কি তাঁকে নিয়ে কোনও বই-ই লেখা হচ্ছে না? নেত্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘বই একটা লেখা হচ্ছে। তবে সে বই তো লিখছেন আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন গবেষক।”

কৈশোর থেকেই জঙ্গলের আনাচে কানাচে যাতায়াত ফরেস্ট গাইড নেত্রপ্রসাদের।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: ধনখড়ের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠকে মমতা, সঙ্ঘাতের আঁচ কমার ইঙ্গিত টুইটে

এর পর সেই বই প্রসঙ্গেই কথা বললেন নেত্রপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে নিজের অজান্তেই এই গোটা বক্সাকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম। হাতের তালুর মতো চিনি প্রতিটা কম্পার্টমেন্ট।” তাঁর এই জঙ্গল-জ্ঞানের জন্যই বক্সাতে গবেষণা করতে আসা অনেক গবেষকই তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন ফিল্ড অ্যাসিস্টান্ট হিসাবে। দেশ-বিদেশের অনেক গবেষকের সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি। যেমন, করেছেন নিতিন শেকরের সঙ্গে। বর্তমানে মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা, তামিল গবেষক নিতিন ২০১০-১৩ ‘এশিয়ার হাতি’ নিয়ে গবেষণা করেন বক্সাতে। সেই সূত্রেই তাঁর আলাপ নেত্রপ্রসাদের সঙ্গে। নেত্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘আমি আসলে কথা বলতে খুব ভালবাসি। নিতিনও খুব মন দিয়ে আমার গল্প শুনতেন। গল্প মানে, জঙ্গলে আমার বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতার গল্প।” ওই গবেষক নেত্রপ্রসাদের সেই কাহিনি রীতি মতো ভিডিয়ো রেকর্ড করে নিয়ে যান। সেটা ২০১৪ সাল।

এর পর ২০১৯ সালে তিনি ফের বক্সায় আসেন লরা বুফা নামে অন্য এক গবেষককে সঙ্গে নিয়ে। আর তখনই নিতিন নেত্রপ্রসাদকে জানান, তাঁর জঙ্গলের গল্পগুলোকে নিয়ে তিনি একটা উপন্যাস লিখতে চান। সেই প্রস্তাবে ফরেস্ট গাইড নেত্রপ্রসাদ আপত্তি করেননি। তিনি বলেন, ‘‘ক’দিন আগেই একটা ইমেল পেয়েছি। ২৭৬ পাতার বই লিখেছেন নিতিন। আমাকে পড়ে দেখতে বলেছেন।” নেত্রপ্রসাদের কথায়, ‘‘নিতিন প্রায়ই বলতেন যে, তিনি আমাকে নিয়ে গল্প লিখতে চান। তাঁর কোনও এক পিতামহ ছিলেন নামী লেখক।” পাণ্ডুলিপি পড়ে বেশ খুশি হয়েছিলেন নেত্রপ্রসাদ। তাঁর প্রাণের থেকে প্রিয় বক্সার গল্প ছড়িয়ে পড়বে বিশ্ব জুড়ে! কিন্তু তার মধ্যেই গোটা পর্বে হ্যারি পটারের স্রষ্টার নাম জুড়ে গিয়ে বিভ্রান্ত তিনি।

জঙ্গলের গলিপথ, শুঁড়িপথ চিনলেও, বাইরের পৃথিবীর অনেক কিছুই নেত্রপ্রসাদের অজানা। তিনি জানেন না, ওই বই কে ছাপছে। বিভ্রান্ত নেত্রপ্রসাদ জানাচ্ছেন, বই কে ছাপবে, তা নিতিন জানেন।

বক্সা টাইগার রিজার্ভের প্রবেশপথ।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: পশ্চাদমুখী ও বোকা বোকা, বিবাহবিচ্ছেদ মন্তব্যে ভাগবতকে কটাক্ষ সোনমের​

তবে, জে কে রোলিং যে নেত্রপ্রসাদকে নিয়ে বই লিখছেন না, সেটা লেখিকার ব্যক্তিগত জনসংযোগ টিমের তরফে জানানো হয়েছে। রোলিংয়ের ওই জনসংযোগ টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাদের তরফে মার্ক হাচিনসন জানিয়েছেন, ‘‘এ রকম খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রোলিং এ রকম কোনও কিছু লিখছেন না।”

গোটা বিষয়টি জানিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল নিতিনের সঙ্গে। কিন্তু, গত তিন দিনে তাঁর তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। অন্য দিকে, রোলিং নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে নেত্রপ্রসাদও জবাব দিতে দিতে জেরবার। অনর্গল কথা বলতে ভালবাসা নেত্রপ্রসাদ এখন ভাবছেন, গল্প বলাটাই না এ বার ছাড়তে হয়!

অন্য বিষয়গুলি:

J. K. Rowling Harry Potter Buxa Tiger Reserve Wildlife Forest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy