প্রতীকী ছবি।
নদিয়ায় নাবালিকার ধর্ষণ-মৃত্যুর তদন্তে ডিএনএ পরীক্ষার পথে হাঁটতে চলেছে সিবিআই।
তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার বাড়ি থেকে নানা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ধৃত সোহেল গয়ালির বাড়ির পিছনের বাগান থেকে একটি ছোট মোবাইল ফোন ও তিনটি মদের বোতল পাওযা গিয়েছে। আর ধৃত প্রভাকরের বাড়ি থেকে তার অন্তর্বাস ও মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। তাদের একটি দল শ্মশানে গিয়ে পোড়া কাঠকয়লা খুঁড়ে আধপোড়া কাপড় উদ্ধার করেছে।
ওই শ্মশানে এক মৃত গোঁসাইয়ের প্রৌঢ়া স্ত্রী থাকেন। এক দোভাষির মাধ্যমে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়: মৃতদেহ কখন সৎকার করতে আনা হয়েছিল?
প্রৌঢ়া বলেন, “সকালে ৭টা নাগাদ।”
সিবিআই: কারা এসেছিল পোড়াতে?
প্রৌঢ়া: মেয়েটার বাড়ির লোক আর গ্রামের লোকজন। মেয়েটার বাবাকে পরে নিয়ে আসা হয়েছিল।
সিবিআই: মৃতদেহ ছেলের ছিল না মেয়ের?
প্রৌঢ়া: মেয়ে।
সিবিআই: তার নাম কী ছিল?
প্রৌঢ়া: জানি না।
সিবিআই: যাদের দাহ করা হচ্ছে তাদের নাম লেখার জন্য এই শ্মশানে কোনও খাতা আছে?
প্রৌঢ়া: নেই।
সিবিআই: কেন নেই?
প্রৌঢ়া: এই শ্মশান দুটো গ্রামের লোক মিলে তৈরি করেছে, ওরাই এখানে মৃতদেহ পোড়ায়।
সিবিআই: মেয়েটির মৃতদেহ পোড়ানোর সময়ে কোথায় ছিলেন?
প্রৌঢ়া: দেহটা যখন আনে, আমি শ্মাশানেই ছিলাম। যখন দাহ করা হয়, তখন গ্রামে চলে গিয়েছিলাম।
পরে তদন্ত সেরে সিবিআই যখন শ্মশান ছেড়ে বেরিয়ে আসছে, তখন তাদের নজরে পড়ে যে এক মহিলা ও দু’টি কমবয়েসি মেয়ে এসে প্রৌঢ়ার সঙ্গে কথা বলছে। সিবিআই তাঁদের জানতে চায়, তাঁরা এখন শ্মশানে কেন এসেছেন। ওই মহিলারা সদুত্তর দিতে না পারায় তাঁধের নাম-ফোন নম্বর নিয়ে অফিসারেরা জানান, পরে সময় মতো তাঁদের ডেকে পাঠানো হবে।
এ দিন সিপিএমের অলোকেশ দাস, ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং মমতাবালা ঠাকুরের প্রতিনিধিরা এসে মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিজেপির ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’র চার সদস্যও এসেছিলেন।
সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, বৃহস্পতিবার থেকেই নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। রক্তমাখা তোশক, জামা, মদের বোতল, একটি মোবাইল হ্যান্ডসেট ও কিছু ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতার বাবা-মা একটি রক্তমাখা পোশাক তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে জানিয়েছেন, সেটি মেয়ের। শুক্রবার দুই ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই। ৪ এপ্রিল সোহেলের বাড়িতে জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে মেয়েটি গণধর্ষিত হয় বলে অভিযোগ। ওই পার্টিতে থাকা তিন যুবকের মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় জন, সোহেলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই সপরিবার গ্রামছাড়া। সিবিআই এ দিন তাদের বাড়ির দরজা সিল করে দিয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনাক্রম অনুযায়ী গণধর্ষণ এবং তার জেরে মৃত্যু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গণধর্ষণের পাশাপাশি খুনের ধারা বলবৎ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই ডিএনএ পরীক্ষার পথে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মেয়েটির অসুস্থতার কথা চিকিৎসক বা বাড়ির বাইরে কাউকে না বলার শাসানি দেওয়া হয়েছিল বলে বলে কোনও কোনও মহল থেকে অভিযোগ উঠছে। গুরুতর জখম কারও চিকিৎসায় বাধা দেওয়া এবং সেই কারণে যদি তাঁর মৃত্যু হয়, তা হলে পরোক্ষে খুন করার অভিযোগই প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজ্য পুলিশের রুজু করা মামলায় মূলত গণধর্ষণ ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ধারা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১২ জন সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত, শ্মশানযাত্রী ও নির্যাতিতার বাবা-মা ও পরিজনদের জবানবন্দি ফের গ্রহণ করা হতে পারে। কারণ অভিযুক্তরা ওই এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। সে কারণে অভিযোগের বয়ানে অসংলগ্নতা থাকতে পারে। সেই কারণেই নতুন করে বয়ান লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।
সিবিআই সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের কয়েক জন প্রতিবেশীর বয়ান লিপিবদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। ওই রাতে অভিযুক্তের বাড়িতে কে কে হাজির ছিল এবং ধর্ষিতাকে কারা তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে। ডিএনএ ও ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার যোগসুত্র তৈরি করা হবে। আপাতত উদ্ধার হওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy