— নিজস্ব চিত্র।
হাত থেকেও নেই। কিন্তু তাতে কিছুই আটকায়নি জগন্নাথ মাণ্ডির। স্বপ্ন তাঁর শিক্ষক হওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে নাছোড় মেমারির আদিবসারী পরিবারের এই কিশোর। তাই পা দিয়ে লিখেই দিচ্ছে মাধ্যমিক। শুধু তাই নয়, পা দিয়ে ভাল ছবিও আঁকে সে। খেলে ফুটবলও।
জগন্নাথের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার সিমলা গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। জন্ম থেকেই রয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। খর্বকায় দু’টি হাতে তালু নেই। নেই আঙুলও। এ হেন জগন্নাথের শৈশব খুব একটা সুখের হয়নি। ছোটবেলাতেই তাকে ছেড়ে চলে যান মা। বাবা, বৃদ্ধা ঠাকুমা, পিসি এবং দাদার স্নেহেই মানুষ।
লেখাপড়া নিয়ে ছোট থেকেই আগ্রহী জগন্নাথ। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। তখন থেকে পা দিয়ে লেখা রপ্ত করতে শুরু করে। ক্রমে সাবলীল হয়ে ওঠে। প্রাথমিকের পাঠ শেষ হলে মেমারির নুদীপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে ভর্তি হয়। ওই স্কুল থেকেই এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে জগন্নাথ। সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে এ বছর এক মাত্র জগন্নাথই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। তার যাতে অসুবিধা না হয়, তাই সতর্ক মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দির পরীক্ষাকেন্দ্রের পরীক্ষকেরা।
জগন্নাথের নিজের স্কুলের শিক্ষকেরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রধান শিক্ষক কিশোর ঘোষাল বলেন, ‘‘জগন্নাথ খুব ভাল ছেলে। লেখাপড়ার বিষয়ে ও খুব সচেতন।’’ কিশোর জানান, জগন্নাথের পরিবার আর্থিক ভাবে একেবারেই সচ্ছল নয়। তবে তার পড়াশোনার বিষয়ে ঠাকুমা-সহ পরিবারের লোকজন উৎসাহ জুগিয়েছেন। জগন্নাথের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুলের তরফে বিশেষ বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলের পাশাপাশি গ্রামে এক জন প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে যেত সে।
শিক্ষকদের পাশাপাশি সহপাঠীরাও বিভিন্ন ভাবে জগন্নাথকে সাহায্য করে। বেশির ভাগ দিন সহপাঠী সাইকেলে চাপিয়ে জগন্নাথকে স্কুলে নিয়ে আসত। প্রধান শিক্ষক এ-ও জানান, পায়ে লিখে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জগন্নাথ যাতে অতিরিক্ত সময় পায়, তার জন্য পর্ষদে আবেদন জানানো হয়েছি। পর্যদ তা অনুমোদন করেছে।
সিমলা গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ সাঁতরা জানান, জগন্নাথ তাঁদের গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রেরণা। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার ক’টা দিন তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, আসার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। পরীক্ষাকেন্দ্র বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অনন্যা তরফদার বলেন, ‘‘পা দিয়ে জগন্নাথ এত সুন্দর করে লিখছে, যা দেখে প্রত্যেকের ভাল লাগছে।’’
জগন্নাথ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তার সব পরীক্ষাই ভাল হয়েছে। পরীক্ষার জন্য প্রতি দিন সে চার-পাঁচ ঘন্টা পড়াশোনা করেছে। কষ্ট যাই হোক, আগামী দিনেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় জগন্নাথ। তার কথায়, ‘‘আমার স্বপ্ন একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। শিক্ষক হয়ে আমার মতো যারা রয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’’ জগন্নাথের ঠাকুমা মুঙ্গলি মাণ্ডি বলেন, ‘‘জগন্নাথ লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের মতো মানুষ হোক, এটাই আমরা চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy