Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ভাতা চাই না চাকরি দিন, মমতাকে চিঠি প্রতিবন্ধীর

পোলিও কেড়েছে পা। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছাড়েননি ভাগ্যলক্ষ্মী দাস। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বছর ছাব্বিশের এই যুবতী এক সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চাকরি চেয়েছিলেন। সরকার বরাদ্দ করে ভাতা। কিন্তু সে ভাতা ফিরিয়ে, ফের চাকরির আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণপাড়ার এই বাসিন্দা।

ভাগ্যলক্ষ্মী দাস। অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

ভাগ্যলক্ষ্মী দাস। অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

পোলিও কেড়েছে পা। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছাড়েননি ভাগ্যলক্ষ্মী দাস। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের বছর ছাব্বিশের এই যুবতী এক সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চাকরি চেয়েছিলেন। সরকার বরাদ্দ করে ভাতা। কিন্তু সে ভাতা ফিরিয়ে, ফের চাকরির আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণপাড়ার এই বাসিন্দা।

ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দাস গাড়িচালক। তাঁর সামান্য আয়েই চলে পাঁচ সদস্যের সংসার। ছোটবেলা থেকে ভাগ্যলক্ষ্মীকে তাই কষ্ট করে চালাতে হয়েছে পড়াশোনা। এক সময় স্কুলের বদান্যতায়, একটু উঁচু ক্লাসে উঠে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে। ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়েটির ঘোরাফেরার ভরসা হাত-প্যাডেলে চালানো প্রতিবন্ধীদের গাড়ি। সে অবস্থাতেও ২০০৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক এবং ২০১০-এ প্রথম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। কম্পিউটার এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মীর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।

মমতা ক্ষমতায় আসার পরে, ২০১২ সালে এক বার দাদা বিশ্বজিতের সঙ্গে ভাগ্যলক্ষ্মী হাজির হন কলকাতার মহাকরণে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি। তবে কী কারণে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান তা লিখে জমা দিতে বলেছিলেন নিরাপত্তা-কর্মীরা। জুটেছিল আশ্বাস, ‘সময়মতো মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নেবেন’।

ডাক আসেনি। তবে বছরখানেক পরে রাজ্য শ্রম দফতর থেকে ফোন করে জানানো হয়, চাকরি নয়, তাঁর জন্য মাসিক ১,৫০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যুবশ্রী প্রকল্পে। ভাগ্যলক্ষ্মীর দাবি, ফোনের অন্য প্রান্তে থাকা শ্রম দফতরের আধিকারিককে তখনই তিনি বলেছিলেন বদান্যতা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। তাই ভাতার সমপরিমাণ বেতনের কাজ দেওয়া হোক তাঁকে। ফোনের ওপার তা শোনে। আশ্বাস দেয়, ‘‘চাকরির কথা ভাবা হবে।’’ ওইটুকুই।

প্রথম কিছু দিন পড়াশোনার কাজে খরচ করলেও গত এক বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভাতার টাকা জমিয়ে আসছেন ভাগ্যলক্ষ্মী। বলছেন, ‘‘প্রতিবন্ধীরা কি কাজে দক্ষ হতে পরে না? আমার যোগ্যতায় যে কাজ জোটা সম্ভব, তার বেশি চাই না। কাজ পেলে দেখাতে পারি, কী করতে পারি। তাই ভাতা ফেরত দিতে চেয়েছি।’’ এই মর্মে সম্প্রতি ফের চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। তবে এ বার ‘নবান্ন’-এ।

ছোটবেলার বান্ধবী সান্ত্বনা খাতুন , মনি ভুঁইমালিরা বলছেন, ‘‘ভাগ্যলক্ষ্মী চায়, কাজের বদলে টাকা। এ ভাবে সরকারি কাজ জোটে না বলে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ওর অগাধ আস্থা।’’ ভাগ্যলক্ষ্মীর দাদা বিশ্বজিৎও বলেছেন, ‘‘মহাকরণ থেকে ফিরে এসেও বোন বলেছিল, ‘মুখ্যমন্ত্রী সব জানলে আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবেন’। কাজ না করে বসে বসে ভাতা নেওয়া হজম হবে না ওর।’’

বীরভূম জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়ি বলেন, ‘‘ভাগ্যলক্ষ্মীর আবেগকে সম্মান জানাচ্ছি। উনি যদি আমাদের দফতরে আবেদন করেন, সেটি যে সব কাজে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত, সেখানে সুপারিশ-সহ পাঠাব।’’ রাজ্যের শ্রম-প্রতিমন্ত্রী জাকির হুসেনের আশ্বাস, ‘‘এ ব্যাপারে শ্রমমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’

ভাগ্যলক্ষ্মী অবশ্য বিশ্বাস করেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠি পড়বেন। চাকরির বার্তাও আসবে ‘নবান্ন’ থেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Lette Mamata Banerjee handicap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy