দেখতে দেখতে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার পরে সাত বছর কেটে গিয়েছে। সেই ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা এখনও ঘরে ফেরেননি, তাঁরা নিখোঁজ না মৃত— সেই ভাবনায় এ বার ইতি টানতে চাইছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ চাইছেন ক্ষতিপূরণ।
২০১০ সালের ২৮ মে সরডিহা ও খেমাশুলির মাঝখানে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনায় এখনও ‘নিখোঁজ’ ১৭ জন। হাসপাতালের মর্গে থাকা দেহগুলি দেখে তাঁদের শনাক্ত করতে পারেনি পরিবার। তারা চায়, নিয়ম মেনে ওই ১৭ জনকে মৃত ঘোষণা করুক প্রশাসন। ‘নিখোঁজদের’ নামে ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু-শংসাপত্র দিয়ে দিক রাজ্য।
মাওবাদীরা ফিশপ্লেট খুলে রাখায় জ্ঞানেশ্বরীর বিভিন্ন কামরা পাশের লাইনে গিয়ে পড়ে। ওই লাইনে এসে পড়া দ্রুত গতির একটি মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ১৪১ জন যাত্রীর। শনাক্ত না-হওয়ায় সেই থেকেই কয়েক জনের দেহাংশ পড়ে রয়েছে মর্গে।
গত ২৮ মে জ্ঞানেশ্বরী-নাশকতার সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। নিখোঁজ ১৭ জনের পরিবার চায়, প্রশাসন এ বার নিখোঁজদের মৃত ঘোষণা করুক। কারণ, সাত বছর পরে নিখোঁজ ব্যক্তিকে মৃত বলে ঘোষণা করাটাই রেওয়াজ ও নিয়ম। ওই সব পরিবার আশা ছেড়ে দিয়ে মেনে নিতে শুরু করেছে, তাদের প্রিয়জন আর বেঁচে নেই। যূথিকা আটা নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘আমার স্বামী ওই ট্রেনে ছিলেন। কিন্তু দেহ না-মেলায় তিনি এখনও নিখোঁজের তালিকায়।’’ যূথিকাদেবী চান, আইন মেনে তাঁর স্বামীকে এ বার মৃত ঘোষণা করুক প্রশাসন। যূথিকাদেবীর স্বামী ছিলেন বাড়ির একমাত্রা রোজগেরে। মৃত ঘোষণা করলে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ রেলে একটা চাকরির আবেদন করতে পারবেন তিনি। আর চাকরি পেলে সংসারটা বাঁচবে।
একই বক্তব্য স্বজনহারানো রাজেশ বাত্রা-র। হাওড়ার ওই বাসিন্দার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ছিলেন জ্ঞানেশ্বরীতা। স্ত্রী-পুত্রের দেহ পাওয়া গিয়েছে। ‘‘মেয়ে এখনও নিখোঁজের তালিকায়। প্রশাসন বরং জানিয়ে দিক, মারা গিয়েছে মেয়ে। তাতে অন্তত একটা সমাপ্তি হবে,’’ বলছেন রাজেশ।
মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সাত বছরের সময়সীমা শেষ হতেই মেদিনীপুরে জেলাশাসকের অফিসে গিয়ে স্বজনহারা পরিবারের অনেকে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। তাঁদের সকলেরই দাবি মোটামুটি এক। জেলা প্রশাসন তাঁদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
মৃত ঘোষণা নিয়ে নবান্নের এক কর্তা জানান, এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের তেমন কিছু করণীয় নেই। নিখোঁজদের মৃত ঘোষণা করতে পারে শুধু আদালত। পরিবারের লোকেরা আদালতে আবেদন জানাতে পারেন। আর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘নিখোঁজদের পরিবার ডেথ সার্টিফিকেট পেলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে নিয়ম মেনে সব কিছুর ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy