Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Gyaneshwari Express

Gyaneshwari Express Accident: জ্ঞানেশ্বরী: মৃত্যুর শংসাপত্র মেলেনি ১১ বছর পরেও

২০১০ সালের ২৮মে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। এই রেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন মারা গিয়েছিলেন বলে খবর।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র

দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ফাইল চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

ময়নাগুড়ির অদূরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। উস্কে গিয়েছে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার স্মৃতি। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত ২৪ জনের পরিবার অবশ্য এখনও মৃত্যুর শংসাপত্রই পায়নি। কয়েকটি পরিবার ওই শংসাপত্র পেতে শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।

২০১০ সালের ২৮মে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের। এই রেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন মারা গিয়েছিলেন বলে খবর। একে একে ১৪৫ জনের দেহ এবং দেহাংশ উদ্ধার হয়েছিল দুর্ঘটনাস্থল থেকে। এর মধ্যে ৩৭ জনের দেহ শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরে ডিএনএ পরীক্ষা হয়। ধাপে ধাপে ১৩ জনের দেহ শনাক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে পুরুষ ৬ জন, মহিলা ৭ জন। ওই ১৩ জনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ৯ জন। ভিন্ রাজ্যের ৪ জন। এই ১৩ জনের মধ্যে ৩ জনের ক্ষেত্রে আবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছিল ২৮ মে, দুর্ঘটনার দিনেই। ৫ জনের ক্ষেত্রে হয় ২৯ মে, বাকি ৫ জনের ক্ষেত্রে ৩০ মে। শুরুতে দেহ এবং দেহাংশ ছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে। মেডিক্যাল সূত্রে খবর, এখন মেদিনীপুর মেডিক্যালে কোনও দেহ কিংবা দেহাংশ আর সংরক্ষিত নেই। অশনাক্ত দেহ পরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার তিন হাসপাতালের মর্গে।

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ১১ বছর। কিন্তু জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে ২৪ জনের দেহ যেহেতু এখনও শনাক্ত করা যায়নি, সেহেতু তাঁদের পরিবার মৃত্যুর শংসাপত্র পায়নি। তবে এই পরিবারগুলি পেয়েছে ক্ষতিপূরণ। রেল এবং রাজ্য, দু’তরফেরই। কিন্তু মৃত্যুর শংসাপত্র না মেলায় স্বজনের চাকরি হয়নি। এ ক্ষেত্রে চাকরির প্রতিশ্রুতি ছিল রেলের। মৃতের স্বজনের চাকরির ক্ষেত্রে মৃত্যুর শংসাপত্র, ডিএনএ রিপোর্ট, মৃতের জীবিতাবস্থার ছবি এবং মৃতদেহের ছবি প্রামাণ্য নথি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিয়মানুযায়ী, সাত বছর কারও খোঁজ না মিললে তাঁর পরিবারকে আদালতে আবেদন করতে হয়। আদালত সবদিক বিবেচনা করে নিখোঁজকে মৃত ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এ জন্যই শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে হাওড়ার সালকিয়ার প্রসেনজিৎ আটার। মেয়ে, বছর ষোলোর পৌলমীকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাঁর স্ত্রী যূথিকা আটার। স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র জোগাড়ে বহু ঘুরেছেন তিনি। ঘটনাস্থল ঝাড়গ্রাম হওয়ায় শেষে সুবিচার চেয়ে ঝাড়গ্রাম আদালতেরই দ্বারস্থ হয়েছেন যূথিকারা। যূথিকা বলছেন, ‘‘এতদিন হয়ে গেল। এখনও মৃত্যুর শংসাপত্রটাই পেলাম না। এখন আমি প্যারালাইসিসে ভুগছি। ডায়ালিসিসও করাতে হচ্ছে।’’ যূথিকাদের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরে নেতা-মন্ত্রীরা ছুটে আসেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরে আর সেই সহানুভূতি থাকে না।’’

দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়েছে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ভাঙাচোরা কামরাগুলি। অথচ ‘ক্ষত’ এখনও রয়েই গিয়েছে। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় স্ত্রী এবং ছেলেকে হারিয়েছেন সুরেন্দ্রকুমার সিংহ। কলকাতার বাসিন্দা সুরেন্দ্রকুমারের স্ত্রী নীলম সিংহ এবং ছেলে রাহুল সিংহ ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের এস-৫ কামরায়। সেই কামরাটি এমন ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল যে, অনেকের দেহ শনাক্তই করা যায়নি। ওই পরিবারগুলি জানাচ্ছে, মৃত্যু হয়েছে বলেই তো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। অথচ, মৃত্যুর শংসাপত্রটুকু দেওয়া হচ্ছে না!

অন্য বিষয়গুলি:

Gyaneshwari Express Jhargram death certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE