Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

সন্দেশখালিতে লুঠপাট, গুলিযুদ্ধ, হত ১

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির জেলিয়াখালি পঞ্চায়েতের পশ্চিমখণ্ড ও পাখিরালয় গ্রামে আবতার মোল্লা এবং আকবর মোল্লা নামে দুই তৃণমূল সমর্থক পরিবারের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিনের। শনিবার ভোরে আকবরের গরু ঢুকেছিল আবতারের জমিতে।

রিক্ত: হিংসার আগুনে পুড়েছে সর্বস্ব। শনিবার সন্দেশখালিতে।

রিক্ত: হিংসার আগুনে পুড়েছে সর্বস্ব। শনিবার সন্দেশখালিতে।

নির্মল বসু
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৪:০০
Share: Save:

এক বাড়ির গরু অন্যের বাগানে ঢুকে খড়-বিচালি খেয়েছিল। শনিবার ভোরে সামান্য এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে গোলমালের সূত্রপাত, তা গড়াল দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে। নিহত হয়েছেন এক যুবক। গুলিবিদ্ধ এক বালক-সহ ৫ জন। একের পর এক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুঠপাট চলে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মোটরবাইক, নৌকো, ধানের গোলা। ভাঙচুর করে পোড়ানো হয় গোটা দশেক দোকান। মহিলাদের শ্লীলতাহানিও হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির জেলিয়াখালি পঞ্চায়েতের পশ্চিমখণ্ড ও পাখিরালয় গ্রামে আবতার মোল্লা এবং আকবর মোল্লা নামে দুই তৃণমূল সমর্থক পরিবারের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিবাদ দীর্ঘদিনের। শনিবার ভোরে আকবরের গরু ঢুকেছিল আবতারের জমিতে। আকবরের ছেলে গরু আনতে গেলে আবতার তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে প্রথমে দু’পরিবারের মহিলাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি বাধে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দু’পক্ষ লোকজন জড়ো করে গুলির লড়াই শুরু করে।

ঘটনাস্থলেই বুকে গুলি লেগে মারা যান নিজামুদ্দিন মোল্লা (৩০) ওরফে ময়না। জখম পাঁচ জনকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল থেকে পরে পাঠানো হয় এনআরএস-এ। তাদের মধ্যে সাবির হোসেন নামে অষ্টম শ্রেণির এক কিশোরও আছে।

নিহত: নিজামুদ্দিন মোল্লা

পুলিশ এসে প্রথমে গ্রামে ঢুকতে পারেনি। পরে বিশাল বাহিনী আসে। এক পক্ষ তৃণমূলের পতাকা নিয়ে পুলিশের সামনেই অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। তারাই পুলিশের কাছে ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযুক্তরা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত।

তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ঘটনার পিছনে হাত আছে বিজেপির। নিহত ময়নাকে তাঁদের দলের সমর্থক বলে দাবি করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘বিজেপি সর্বত্রই গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে।’’ তাঁর দাবি, জয়নাল মোল্লা নামে তাঁদের দলের এক কর্মী সম্প্রতি বিজেপিতে গিয়েছে। সে-ই কিছু দুষ্কৃতীকে জড়ো করে দল পাকিয়ে এলাকার দখল নিতে চাইছে। তারাই এ দিন গুলি চালিয়েছে। গ্রামবাসীরা রুখে দাঁড়ানোয় দুষ্কৃতীরা পালায়।

বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের দলের অস্তিত্বই নেই। পুরোটাই তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের ফল।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সাইফুদ্দিন এক সময়ে শাসক দলের নেতা শিবু হাজরার ডান হাত ছিলেন। ইদানীং দু’জনের দূরত্ব বেড়েছে। এলাকা দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মারপিট বাধছে। সাইফুদ্দিন অবশ্য শিবু-গোষ্ঠীর উপরেই সব দায় চাপিয়েছেন।

শেষ-চেষ্টা: বালতি করে জল ঢেলে শেষ সম্বলটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বৃদ্ধা।

সন্দেশখালির ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শিবু হাজরার দাবি, এলাকায় ইদানীং যে গুন্ডাবাহিনী তৈরি হয়েছে, তারা কোনও দলের নয়। কিন্তু তাদের কাজে লাগিয়ে এলাকা অশান্ত করতে চাইছে বিজেপি। ক’দিন আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সন্দেশখালিতে সভা করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি উস্কানি দিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ শিবুর।

গ্রামবাসীদের একটা বড় অংশ শিবুবাবুর বিরুদ্ধেই সরব। তাঁর স্ত্রী বন্যা হাজরা জেলিয়াখালি পঞ্চায়েতের প্রধান। স্বামী-স্ত্রী গোষ্ঠীকোন্দলকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের জেলিয়াখালি অঞ্চল যুব সভাপতি শেখ আলাউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘শিবু-বন্যাদের উপরে মানুষ ক্ষিপ্ত। শিবুর ইন্ধনেই একদল দুষ্কৃতী এ দিন হামলা চালিয়েছে।’’

সহ প্রতিবেদন: সামসুল হুদা
ছবি: নির্মল বসু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy