ফাইল চিত্র।
করোনাকালের শেষ পর্বে অনলাইন ও অফলাইনে পঠনপাঠন একসঙ্গে চালানো নিয়ে সমস্যা ও সমালোচনা জোরদার হয়েছিল। স্কুল খোলার পরে ক্লাসের পরীক্ষা অনলাইন ও অফলাইনে নেওয়ার টানাপড়েনকে ঘিরে অন্য জট পাকিয়েছে। এমনকি দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ক্লাসের পরীক্ষা অনলাইনে করার দাবিতে কয়েক জন অভিভাবক বৃহস্পতিবার বিক্ষোভও দেখান। কিছু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে আটক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উদ্ধার করে।
করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও বেশির ভাগ স্কুলে এখনও প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা হচ্ছে অনলাইনে। অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অবশ্য অফলাইনে নিচ্ছে প্রায় সব স্কুলই। অধিকাংশ অভিভাবক অফলাইন পরীক্ষারই পক্ষপাতী। নিচু ক্লাসের কিছু পরীক্ষা অনলাইনে হলেও বোর্ডের দশম ও দ্বাদশের পরীক্ষা যে অফলাইনেই হবে, বুধবার সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কিছু স্কুল অফলাইন পরীক্ষার সঙ্গে অনলাইন পরীক্ষার বিকল্পও রাখছে। যে-সব অভিভাবক অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে, তাঁদের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি কাটেনি। পড়ুয়ারা দীর্ঘ দু’বছর ধরে অনলাইনে পড়াশোনা করল এবং অনলাইনে পরীক্ষা দিল। তাই প্রাথমিক থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই শিক্ষাবর্ষের শেষ পরীক্ষাটা তাঁদের ছেলেমেয়েরা অনলাইনেই দিক।
অভিভাবকদের একাংশ মনে করছেন, দু’বছর ধরে অনলাইনে পড়া ও অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার পরে হঠাৎ অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট পরীক্ষার্থীর মনে চাপ পড়ছে। তাই যারা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চাইছে, তাদের জন্য অনলাইন পরীক্ষার বিকল্পও রাখা হোক। বেসরকারি স্কুলগুলির অভিভাবক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “অফলাইনে পরীক্ষা হলে তার রুটিন এবং পরীক্ষার পাঠ্যক্রম অনেক আগে থেকে স্কুলগুলির তরফে পরীক্ষার্থীদের দিয়ে দিতে হবে। যেটা অনেক বেসরকারি স্কুলই করছে না। পরীক্ষার কয়েক দিন আগে তারা রুটিন দিচ্ছে। এর ফলে দু’বছর ধরে অনলাইনের পরীক্ষায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া পড়ুয়ারা মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছে। ফলে কিছু অভিভাবক চান, অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনে পরীক্ষা হোক।”
পার্ক সার্কাসের ডন বস্কো স্কুল জানাচ্ছে, এই শিক্ষাবর্ষে তারা পুরোপুরি অফলাইন পরীক্ষায় চলে যায়নি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে। তার পরে সপ্তম শ্রেণি থেকে অফলাইন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ডন বস্কোর অধ্যক্ষ ফাদার বিকাশ মণ্ডল জানান, বহু দিন পরে পড়ুয়ারা যে-হেতু অফলাইন পরীক্ষায় ফিরল, তাই অফলাইন পরীক্ষার পূর্ণ নম্বর কিছুটা কম করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, সারা বছর ধরে যে-মূল্যায়ন হয়েছে, তা হয়েছে অনলাইনেই। ফলে অফলাইনে পরীক্ষা হলেও ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সেটা চাপের হবে না। কিছু অভিভাবক অনলাইনে পরীক্ষার দাবি জানালেও সপ্তম শ্রেণি থেকে অফলাইনের বিকল্প হিসেবে অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা
হচ্ছে না।
শ্রীশিক্ষায়তনে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অফলাইন পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলেও ওই স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা যেতেই পারে। ব্রততীদেবী বলেন, “আমাদের স্কুলের প্রায় সব পড়ুয়ার অভিভাবকই অফলাইন পরীক্ষার পক্ষে। তাই আমরা অফলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছি। তবে আমাদের স্কুলে অনলাইন পরীক্ষার পরিকাঠামোও যথেষ্ট ভাল। এমন প্রযুক্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হয় যে, বাড়ি থেকে পরীক্ষা দিলেও বই দেখে লেখার কোনও সুযোগ
থাকে না।”
ব্রততীদেবীর বক্তব্য, করোনা দেখিয়ে দিল, ঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা একসঙ্গে অনলাইনেও নেওয়া যায়। তিনি বলেন, “স্কুলের পরীক্ষা পদ্ধতি কিন্তু আস্তে আস্তে পাল্টানো যেতে পারে। তার জন্য প্রশ্নপত্রের ধরনও পাল্টানো দরকার।
এমন প্রশ্ন করতে হবে, যাতে দেখে দেখে প্রশ্নের উত্তর লেখা না-যায়। অফলাইনের পরীক্ষা তো অনেকটা মুখস্থ বিদ্যারও উপরে নির্ভর করে। মুখস্থ বিদ্যা কোনও কাজে আসবে না, এমন ধরনের প্রশ্ন করতে হবে অনলাইন পরীক্ষায়।”
রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধক্ষ্য সুজয় বিশ্বাস জানান, তাঁদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
বাকি ক্লাসের পরীক্ষা হচ্ছে অফলাইনে। সুজয়বাবু বলেন, “কিছু অভিভাবাক চাইছেন, এই শিক্ষাবর্ষের শেষ পরীক্ষা হোক অনলাইনেই। আমরাও ঠিক করেছি, অফলাইনে ফিরব ধীরে ধীরে। তাই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছি। অফলাইনে ফিরতে পড়ুয়াদের মানসিক প্রস্তুতির
সময় দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy