আনন্দ-সুকান্ত বৈঠকের পর রাজভবনের এই ‘তৎপরতা’ অনেকেরই নজর কেড়েছে। ফাইল ছবি।
তবে কি সখ্য-পর্বে ইতি? রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে শনিবার বৈঠকের পরেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ‘জরুরি তলব’ ঘিরে আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ-রাজনীতিতে। শুধু পঞ্চায়েতমন্ত্রীই নন, শনিবার রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয়েছে পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথনেরও। আনন্দ-সুকান্ত বৈঠকের পর রাজভবনের এই ‘তৎপরতা’ অনেকেরই নজর কেড়েছে। মনে পড়িয়েছে প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জমানার কথাও। যদিও পঞ্চায়েতমন্ত্রী বিষয়টিকে রাজ্যপালের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই জানিয়েছেন।
শনিবার রাজভবনে গিয়েছিলেন সুকান্ত। রাজভবন সূত্রে খবর, সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়। ওই সূত্রের দাবি, সুকান্ত রাজভবন ছাড়ার পরেই পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে ডেকে পাঠানো হয়। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যপাল রাজ্যের গ্রামীণ উন্নয়নের নানা প্রকল্প নিয়ে ওঠা অভিযোগ ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চান বলে ওই সূত্রের দাবি। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির তোলা অভিযোগ নিয়েও রাজ্যপাল জানতে চান মন্ত্রীর কাছে। তবে সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে ১০০ দিনের কাজ এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে। এই দু’টি প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা নিয়ে কেন্দ্র যে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছে, তা নিয়ে রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, সে বিষয়েও রাজ্যপাল জানতে চান বলে রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে তিনি সবিস্তার রিপোর্টও চেয়েছেন বলে দাবি ওই সূত্রের।
তবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী রাজ্যপালের সঙ্গে এই বৈঠককে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই জানিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রদীপ বলেন, ‘‘এটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলাই ভাল। আমি দীর্ঘ দিন ধরে সরকারের কৃষি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম দেখাশোনা করি। সেই সব বিষয় নিয়েই মূলত রাজ্যপালের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি পঞ্চায়েত সংক্রান্ত অনেক কিছু আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন।’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। কেরলের মতো রাজ্যে মুখ্যসচিবের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। তাই তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তিনি নিজের সেই সব অভিজ্ঞতার কথা আমাকে বলেছেন।’’
রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত সচিবের সঙ্গেও শনিবার কথা বলেছেন রাজ্যপাল। পঞ্চায়েত দফতরের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে তাঁর কাছে রিপোর্ট ‘তলব’ করেছেন তিনি। যদিও নবান্নের তরফে এ নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি এবং রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীর ‘সাক্ষাৎ’-এর পরে শনিবার একটি কড়া বিবৃতি জারি করে রাজভবন। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যথা সময়ে ‘কার্যকরী ও সক্রিয়’ হস্তক্ষেপ করা হবে। সঙ্গে বলা হয়েছে, নির্বাচনে হিংসার কোনও স্থান নেই এবং আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভাবে হয়, তা-ও নিশ্চিত করা হবে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে শাসকদলের হিংসার কথা যে বিজেপি সভাপতিই তাঁকে জানিয়েছেন, তা-ও নিজের বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল। দুর্নীতি নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’-এর কথাও রাজ্যপাল বলেছেন ওই বিবৃতিতে।
রাজ্যপালের ওই বিবৃতি জারির পরেই জানা যায়, রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী ও পঞ্চায়েত সচিবের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছেন আনন্দ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, গত দু’মাসের কার্যকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ গড়ে তোলার পর কি কিছুটা হলেও বিরোধী দল বিজেপির কথাও গুরুত্ব দিয়ে শুনতে শুরু করেছেন রাজ্যপাল? কারণ রাজ্যপালের কড়া বিবৃতি প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে শনিবার বলতে শোনা গিয়েছে, রাজ্যপাল ‘ট্র্যাক’-এ আসছেন। অর্থাৎ, ‘পথে’ আসছেন। যে ‘পথ’ তাঁরা চান।
শুভেন্দুর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যস্তরের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “ওরা ভাবছে রাজভবনের ভোলবদল হচ্ছে? আরে রাজ্যপাল তো সকলের। তিনি বিরোধী দলের কোনও নেতার কথা শুনে যদি বিষয়টিকে যাচাই করে নেন, তাতে অসুবিধা কোথায়! এটা তো প্রশাসনিক বিষয়। ওদের মতো আমরা প্রশাসনকে দলের ট্যাঁকে ভরি না। ওটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy